মায়ানমারের ভূমিকম্প কে পারমানবিক বিস্ফোরণের সঙ্গে তুলনা ভূতাত্ত্বিক দের

ম্যান্ডালে, ৩০ মার্চ ২০২৫: শুক্রবার (২৯ মার্চ) মায়ানমারে (myanmar) আঘাত হানা ৭.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পটি প্রায় ৩০০টিরও বেশি পারমাণবিক বোমার সমান শক্তি নির্গত করেছে বলে…

myanmar earthquake

ম্যান্ডালে, ৩০ মার্চ ২০২৫: শুক্রবার (২৯ মার্চ) মায়ানমারে (myanmar) আঘাত হানা ৭.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পটি প্রায় ৩০০টিরও বেশি পারমাণবিক বোমার সমান শক্তি নির্গত করেছে বলে জানিয়েছেন ভূতাত্ত্বিক জেস ফিনিক্স। সিএনএন-এর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “এই ভূমিকম্প থেকে নির্গত শক্তি প্রায় ৩৩৪টি পারমাণবিক বোমার সমতুল্য।”

   

মায়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ম্যান্ডালে এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল এবং এটি মাটির ১০ কিলোমিটার গভীরতায় আঘাত হানে বলে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মতে, এই ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১,৬০০ ছাড়িয়েছে, তবে ইউএসজিএস-এর প্রাথমিক অনুমানে বলা হয়েছে, মৃতের সংখ্যা ১০,০০০-এর বেশি হতে পারে।

Advertisements

ভূমিকম্পের তীব্রতা ও পরবর্তী ঝুঁকি (myanmar)

জেস ফিনিক্স আরও সতর্ক করে বলেছেন, ভারতীয় টেকটনিক প্লেট এবং ইউরেশীয় প্লেটের মধ্যে চলমান সংঘর্ষের কারণে মিয়ানমারে আগামী কয়েক মাস ধরে আফটারশক অব্যাহত থাকতে পারে। তিনি বলেন, “এই অঞ্চলটি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় অবস্থিত এবং এই ধরনের বড় মাত্রার ভূমিকম্পের পর আফটারশক গুলো স্বাভাবিক।”

শুক্রবার দুপুরে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের পর ৬.৪ মাত্রার একটি শক্তিশালী আফটারশক ও রেকর্ড করা হয়েছে। এই পরিস্থিতি মায়ানমারের জন্য আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে, কারণ দেশটি বর্তমানে একটি গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্ল্যাকআউট চলছে। ফিনিক্সের মতে, “এই যুদ্ধ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে বাইরের বিশ্ব এই দুর্যোগের পূর্ণাঙ্গ চিত্র বুঝতে পারছে না।”

আরো দেখুন রাজ্যজুড়ে জাল ওষুধের বিরুদ্ধে অভিযান, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিকে সতর্ক করতে নবান্নের নয়া পদক্ষেপ

মৃত্যু ও ধ্বংসলীলা

মায়ানমারের (myanmar) সামরিক সরকার জানিয়েছে, ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ১,৬৪৪ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে এবং ৩,০০০-এর বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। ম্যান্ডালে ও রাজধানী নেপিডোসহ ছয়টি অঞ্চল ও রাজ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এমআরটিভি এই ঘোষণা প্রচার করলেও ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের পূর্ণ বিবরণ প্রকাশ করেনি।

ম্যান্ডালে শহরে বহুতল ভবন ধসে পড়েছে এবং উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককেও এই ভূমিকম্পের তীব্র কম্পন অনুভূত হয়। সেখানে একটি নির্মাণাধীন বহুতল ভবন ধসে ৬ জন নিহত, ২২ জন আহত এবং ১০১ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

গৃহযুদ্ধ ও ত্রাণ প্রচেষ্টায় বাধা

মায়ানমার বর্তমানে ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে চলমান গৃহযুদ্ধে জর্জরিত। এই সংঘাতের কারণে দেশের অনেক এলাকায় প্রবেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। ফিনিক্স বলেন, “এই যুদ্ধের মধ্যে ভূমিকম্পের ধাক্কা দেশটির দুর্দশাকে আরও খারাপ করবে।” যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্ল্যাকআউটের কারণে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয়রা খালি হাতে ধ্বংসস্তূপ থেকে বেঁচে থাকা মানুষদের উদ্ধারের চেষ্টা করছেন, কিন্তু ভারী যন্ত্রপাতি ও পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে কাজটি কঠিন হয়ে পড়েছে।

আন্তর্জাতিক সাহায্য

বিপর্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে মায়ানমারের সামরিক সরকার বিরলভাবে আন্তর্জাতিক সাহায্যের আহ্বান জানিয়েছে। ভারত একটি উদ্ধার ও ত্রাণ দল পাঠিয়েছে, যারা কম্বল, ত্রিপল, স্বাস্থ্যবিধি কিট, স্লিপিং ব্যাগ, সোলার ল্যাম্প, খাদ্য সামগ্রী এবং রান্নাঘরের সরঞ্জাম নিয়ে এসেছে। চীনের ইউনান প্রদেশ থেকে ৩৭ সদস্যের একটি দল ইয়াঙ্গুনে পৌঁছেছে।

তারা জীবন রক্ষাকারী যন্ত্র, ভূমিকম্প সতর্কীকরণ ব্যবস্থা, ড্রোন এবং অন্যান্য জরুরি সরঞ্জাম নিয়ে ত্রাণ ও চিকিৎসা কার্যক্রমে সহায়তা করছে। চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ইউনান প্রদেশেও এই ভূমিকম্পের তীব্র কম্পন অনুভূত হয়েছে। রাশিয়ার জরুরি মন্ত্রণালয় দুটি বিমানে ১২০ জন উদ্ধারকর্মী এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পাঠিয়েছে বলে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা টাস জানিয়েছে।

প্রতিবেশী দেশে প্রভাব

ম্যান্ডালে থেকে প্রায় ১০০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ব্যাংককে ভূমিকম্পের কম্পন তীব্রভাবে অনুভূত হয়। নির্মাণাধীন একটি ৩৩ তলা ভবন ধসে পড়ে, যার ফলে উদ্ধারকারীরা এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া শ্রমিকদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। থাই প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন শিনাওয়াত্রা ব্যাংকককে জরুরি অবস্থার এলাকা ঘোষণা করেছেন এবং বাসিন্দাদের উঁচু ভবন থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

ভবিষ্যৎ উদ্বেগ

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহে পরাঘাত অব্যাহত থাকলে ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়তে পারে। মিয়ানমারের দুর্বল অবকাঠামো এবং চলমান সংঘাতের কারণে ত্রাণ কার্যক্রমে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিভাগ জানিয়েছে, দেশটিতে

ইতিমধ্যে ২০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ সাহায্যের প্রয়োজনে রয়েছে। এই ভূমিকম্প সেই সংকটকে আরও তীব্র করেছে।
মিয়ানমারের এই দুর্যোগ কবে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসবে, তা এখনও অনিশ্চিত। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং স্থানীয় উদ্যোগে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে।