ওয়াশিংটন, ২৬ সেপ্টেম্বর: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দক্ষিণ এশিয়া নীতিতে মিশ্র সংকেতের ঝড় উঠেছে (World News)। একদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘বন্ধু’ বলে লোভ দেখিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর সাথে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার কৃতিত্ব দিয়েছেন, অন্যদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ এবং সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে হোয়াইট হাউসে লাল কার্পেট বিছিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন।
পূর্বে পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসবাদী আশ্রয়স্থল’ বলে তিরস্কার করা ট্রাম্পের এই উল্টো ফিরে আসা ভারতে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ট্রাম্পের বাণিজ্যিক লোভ এবং ভূ-রাজনৈতিক খেলার ফল, যা ভারত-আমেরিকা সম্পর্ককে বিপন্ন করতে পারে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ৮০ মিনিটের বৈঠকে ট্রাম্প শরীফ এবং মুনিরের সাথে হাসি-ঠাট্টা করেছেন, থাম্বস-আপ সাইন দিয়ে আলিঙ্গন করেছেন এবং ফাইটার জেটের পিন পরে ছবি তুলেছেন।
ভাইস প্রেসিডেন্ট জে.ডি. ভ্যান্স এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর উপস্থিতিতে এই বৈঠককে উচ্চপ্রতিষ্ঠানের স্তর দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসবাদের স্থপতি’ বলে অভিযোগ করতেন, বিশেষ করে ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য। কিন্তু এবার তিনি পাকিস্তানের সাথে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের খনিজ চুক্তি (ক্রিটিক্যাল মিনারেলস) স্বাক্ষর করেছেন, যা চীনের প্রভাব কমানোর লক্ষ্যে। এটি পাকিস্তানের বালুচিস্তানের খনিজ সম্পদকে ওয়েস্টার্ন বিনিয়োগের জন্য খুলে দিয়েছে, যা ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ।
এই ঘটনার পটভূমি মে মাসের ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ। ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হলে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালিয়ে পাকিস্তানের জঙ্গি ক্যাম্পে হামলা করে। চার দিনের যুদ্ধে ৪৭ জন মারা যান, পাকিস্তান দাবি করে ভারতের ৫টি জেট নামিয়েছে। সিজফায়ারের পর ট্রাম্প দাবি করেন, তাঁর মধ্যস্থতায় যুদ্ধ থামিয়েছেন এবং পাকিস্তান তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের প্রস্তাব দেবে।
কিন্তু মোদী জুন মাসে ট্রাম্পকে ফোনে জানান, সিজফায়ার ভারত-পাকিস্তানের সরাসরি আলোচনায় হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা নেই। এই ফোনে ট্রাম্পের দাবি খারিজ করে মোদী বলেন, ভারত কখনো মধ্যস্থতা মেনে নেবে না এবং অপারেশন সিঁদুর চলবে। ট্রাম্পের দাবি খারিজ করে মোদী বলেন, ভারত কখনো মধ্যস্থতা মেনে নেবে না এবং অপারেশন সিঁদুর চলবে।এই ঘটনা ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট অনুসারে, ট্রাম্পের দাবি মোদীর রাজনৈতিক ইমেজকে আঘাত দিয়েছে, কারণ দেশে তাঁকে ‘পাকিস্তানের সামনে হাত তুলে নেওয়া’ বলে সমালোচনা হয়েছে। বিজেপির সমর্থকরা এটাকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ বলছেন। অগাস্টে ট্রাম্প আবার দাবি করেন, তিনি মোদীকে উচ্চ ট্যারিফের হুমকি দিয়ে যুদ্ধ থামিয়েছেন।
মাওবাদী সংগঠনে চিড়? আত্মসমর্পণ নিয়ে দুই শীর্ষ নেতার দ্বন্দ্ব!
এর জবাবে মোদী সিও সামিটে (তিয়ানজিন) পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সতর্ক করেন এবং চীনকে স্মরণ করান যে সহযোগিতা সার্বভৌমত্বের উপর আধিপত্য নয়। এতে ট্রাম্পকে পরোক্ষভাবে বার্তা দেওয়া হয়েছে যে ভারত আমেরিকান অনুমোদনের বাইরে অপশন রাখে।