মরক্কোতে অভাবনীয় এক তরুণ আন্দোলনের জন্ম দিয়েছে GenZ 212 নামে এক যুবসমাজভিত্তিক সংগঠন। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ডিসকোর্ড থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন মুহূর্তের মধ্যে রাস্তায় ছড়িয়ে পড়েছে, যা দেশটির রাজনৈতিক মহল ও প্রশাসনকে অবাক করেছে।
কীভাবে শুরু হল GenZ 212?
সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে একদল তরুণ ডিসকোর্ডে “GenZ 212” নামে একটি কালেক্টিভ তৈরি করে। নামের মধ্যে Gen Z (১৯৯০-এর শেষ থেকে ২০১০-এর শুরুর দিকে জন্ম নেয়া প্রজন্ম) এবং +212 (মরক্কোর আন্তর্জাতিক ফোন কোড) মিলিয়ে নেওয়া হয়।
আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে সামাজিক বৈষম্য তুলে ধরার মধ্য দিয়ে। বিশেষ করে গত মাসে আগাদির শহরে একটি সরকারি হাসপাতালে আটজন গর্ভবতী নারীর মৃত্যুর খবর আন্দোলনের আগুনে ঘি ঢালে।
গ্রুপটি নিজেদেরকে “স্বাধীন যুব আন্দোলন” হিসেবে পরিচয় দিলেও, তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নয় বলে দাবি করেছে। এমনকি রাজা মোহাম্মদ ষষ্ঠের প্রতি তাদের ভালোবাসা ও আনুগত্যও প্রকাশ করেছে।
কেন রাস্তায় নামল GenZ 212?
প্রতিদিন রাতে ডিসকোর্ডে আলোচনা শেষে ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়—কী করা হবে। ২৭ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো শান্তিপূর্ণ মিছিলে নামার সিদ্ধান্ত নেয় তারা।
প্রথমে প্রশাসন ও মিডিয়া এই আন্দোলনকে গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু যখন সরকার মিছিল নিষিদ্ধ করে, তখন অনলাইনে সদস্য সংখ্যা দ্রুত বেড়ে ১ লাখ ৭০ হাজার ছাড়িয়ে যায়।
কিছু জায়গায় সহিংসতা হলেও সংগঠনটি বারবার জানিয়েছে—তারা কোনো ধরনের সহিংসতার সঙ্গে জড়িত নয়। তবু আগাদিরে পুলিশের গুলিতে তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনা আন্দোলনে নতুন উত্তেজনা যোগ করেছে।
কী চাইছে GenZ 212?
- তাদের প্রধান দাবি হলো—সরকারি স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার।
- সরকারি হাসপাতালগুলোতে অতিরিক্ত ভিড় ও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাব।
- স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকার সীমিত, ফলে গরিব মানুষ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
- স্কুলগুলোতেও ভিড় ও অনুদানের ঘাটতি রয়েছে।
এক তরুণী বিক্ষোভকারী ফাতিমা জাহরা বলেন—
👉 “হাসপাতালে জায়গা পেতে ঘুষ দিতে হয়। এটা অমানবিক।”
যদিও একসময় আন্দোলন থেকে সরকারের পদত্যাগ দাবি করা হয়েছিল, পরে তারা সেই দাবি প্রত্যাহার করে কেবল স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সংস্কারকেই মূল লক্ষ্য হিসেবে রাখে।
বিশ্বকাপ ইস্যুতে তরুণদের ক্ষোভ
- মরক্কো ২০৩০ ফুটবল বিশ্বকাপ স্পেন ও পর্তুগালের সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজন করবে। এই নিয়ে ব্যাপক অবকাঠামোগত বিনিয়োগ চলছে।
- ২০২৮ সালের মধ্যে প্রায় ১.৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণ হবে।
- রেল, বিমানবন্দর ও ৫জি ইন্টারনেট প্রকল্পেও বিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছে।
প্রদর্শনকারীদের স্লোগান— 👉 “স্টেডিয়াম নয়, হাসপাতাল চাই।”
তাদের মতে, বিশ্বকাপ আয়োজন থামাতে নয়, বরং একই ধরনের বিনিয়োগ স্বাস্থ্য ও শিক্ষাতেও হওয়া উচিত।
কেন আন্দোলন সবাইকে অবাক করেছে?
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোহাম্মদ চিকের মতে, মরক্কোর তরুণরা আগে রাজনৈতিকভাবে অনাগ্রহী হিসেবে পরিচিত ছিল। তারা স্টেডিয়ামে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও রাস্তায় সংগঠিত আন্দোলন খুব কমই দেখা গেছে।
কিন্তু হঠাৎ জন্ম নেওয়া এই GenZ 212 আন্দোলন প্রমাণ করেছে—তরুণ সমাজ কেবল সোশ্যাল মিডিয়ায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং বাস্তবেও সামাজিক ও রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরি হচ্ছে।