মার্কিন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সম্পর্ক নিয়ে ফের নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। জার্মান সংবাদপত্র ফ্রাঙ্কফুর্টার অ্যালজেমাইন একটি বিস্ফোরক প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানিয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহে অন্তত চারবার মোদীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু প্রতিবারই মোদী ফোন ধরেননি। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ট্রাম্পের উপর বর্তমানে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ এবং তিনি স্পষ্ট বার্তা দিতে চাইছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের (India-US) সম্পর্ক সমান মর্যাদার ভিত্তিতে গড়ে উঠবে, চাপের মুখে নয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের শাসনকালে মার্কিন প্রশাসনের একাধিক কৌশলগত সিদ্ধান্তে ভারত খুশি ছিল না। বিশেষত, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির আমেরিকা সফরের ঘটনা ভারতীয় কূটনৈতিক মহলে ভালোভাবে গ্রহণ করা হয়নি। ট্রাম্প প্রশাসন পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সংঘর্ষবিরতির দাবি করে নিজের কৃতিত্ব প্রচার করায় দিল্লি বিরক্ত হয়। এর পাশাপাশি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের উপর প্রায় ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক চাপিয়ে দেয়, যা ভারতের অর্থনৈতিক স্বার্থে বড় আঘাত হিসেবে দেখা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মোদী ট্রাম্প প্রশাসনের একাধিক পদক্ষেপকে প্ররোচনা হিসেবে দেখছেন। ভারতীয় কূটনীতিকদের মতে, মার্কিন নীতিগুলি স্পষ্টভাবে ভারতের বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়েছিল। যদিও প্রকাশ্যে ভারত সরকার এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি, কূটনৈতিক অঙ্গনে এই খবর নিয়ে গুঞ্জন চলছে।
একই সময়ে ভারতের বিদেশনীতি স্পষ্টভাবে বহুমুখী কূটনীতির দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক শীতল হওয়ার পরই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন মোদী। রাশিয়া সফরে গিয়েছিলেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। এর পাশাপাশি, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি চীনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই দিল্লি সফরে এসে মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। শিগগিরই চিন সফরে যাবেন মোদী।
এই পরিস্থিতি ভারত-মার্কিন সম্পর্কের কূটনৈতিক সমীকরণে নতুন প্রশ্ন তুলছে। দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকা ভারতের একটি অন্যতম কৌশলগত মিত্র হিসেবে পরিচিত হলেও, বর্তমান পরিস্থিতি দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত এখন বহুমুখী কূটনৈতিক কৌশল নিচ্ছে যাতে কোনো একটি দেশের উপর নির্ভরতা তৈরি না হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, মোদীর ফোন ধরতে অস্বীকার করা কেবল একটি বার্তাই দেয় না, বরং ভারত এখন আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজের শক্তিশালী অবস্থান প্রমাণ করতে চায়। মার্কিন বাজারে ভারতের রপ্তানি নির্ভরতা থাকলেও, ভারত অর্থনৈতিক ও কৌশলগতভাবে নিজস্ব স্বার্থ রক্ষার দিকে জোর দিচ্ছে। অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের একাধিক নীতি দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্য নষ্ট করছে বলে ভারতীয় বিশ্লেষকদের অভিযোগ।
যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোনও সরকারি প্রতিক্রিয়া মেলেনি, তবে কূটনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় উঠেছে। একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ইতিমধ্যেই ভারত-মার্কিন সম্পর্কের এই টানাপোড়েনকে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কৌশলগত ভারসাম্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে চিহ্নিত করছে।