মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতি (Middle East Crisis) নিয়ে জম্মু-কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্সের প্রেসিডেন্ট এবং জাম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা (Farooq Abdullah) গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনার উপর আমেরিকার আক্রমণ এবং ইসরায়েল-ইরানের চলমান সংঘাত নিয়ে মুসলিম দেশগুলির নীরবতা তাঁকে বিস্মিত করেছে। তিনি বলেছেন, “আমি দুঃখিত যে মুসলিম দেশগুলি চুপচাপ বসে এই নাটক দেখছে। আজ ইরান এই অবস্থায় আছে, কিন্তু কাল অন্যান্যরাও আমেরিকার হাতে ধ্বংস হবে… যদি তারা আজ না জেগে ওঠে, তাহলে তাদের নিজেদের পালা অপেক্ষা করতে হবে।”
ফারুক আবদুল্লার এই বক্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলির উপর আমেরিকার আক্রমণ একটি বড় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই আক্রমণের পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন যে, আমেরিকা এবং ইসরায়েল একটি “খুব বড় লাল রেখা” পার হয়েছে। ইরানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, যারা এই আক্রমণকে সমর্থন করে, তাদেরকে “দ্রোহী” বলা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মুসলিম বিশ্বের নীরবতা নিয়ে ফারুক আবদুল্লার উদ্বেগ স্পষ্ট। তিনি মনে করেন যে, এই সংঘাতের প্রভাব শুধুমাত্র ইরানে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এর প্রভাব অন্যান্য দেশেও পড়বে। তিনি বলেছেন, “এটা তাদের আজকের অবস্থা, কাল অন্যদেরও আলাদা হবে। অন্যরা এখান থেকে আসবে এবং আমেরিকাও তাদের মারার চেষ্টা করবে। তাই তারা চুপ থাকে।”
ফারুক আবদুল্লার বক্তব্যের পেছনে একটি বড় প্রেক্ষাপট রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতের মধ্যে ইসরায়েল এবং ইরানের মধye একটি শক্তিশালী সামরিক বিরোধীতা দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলের আক্রমণের পর ইরান দুটি মিসাইল হামলা চালিয়েছে, যা ইসরায়েলের মূল্যবান স্থানগুলিকে লক্ষ্য করেছে। এই হামলার পর ইসরায়েল জুড়ে বিমানঘটনার সাইরেন শোনা গেছে, যা এই সংঘাতের তীব্রতা বোঝাতে পারে।
এই সংঘাতের মধ্যে আমেরিকার ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলির উপর আক্রমণ চালানো হয়েছে। ট্রাম্পের দাবি, “আমরা তাদের হাত থেকে বোমা নিয়ে এসেছি।” তবে এই আক্রমণের পর ইরানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, তাদের পারমাণবিক জ্ঞানকে বোমাবর্ষণ দ্বারা ধ্বংস করা সম্ভব নয়।
মুসলিম বিশ্বের নীরবতা নিয়ে ফারুক আবদুল্লার উদ্বেগের মূল কারণ হলো এই সংঘাতের প্রভাব। তিনি মনে করেন যে, এই সংঘাতের ফলে তেলের সরবরাহ বন্ধ হতে পারে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। তিনি বলেছেন, “তেল তাদের কাছ থেকে আসে। যখন তা বন্ধ হয়, তখন আমাদের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।” এছাড়া তিনি জানিয়েছেন যে, এই সংঘাত ধীরে ধীরে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যা মানুষের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
ফারুক আবদুল্লার বক্তব্যের আরেকটি দিক হলো ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের সম্ভাবনা। তিনি বলেছেন, “ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে কোনো সঙ্কট আছে কি না, তা বলা শক্ত। আল্লাহ জানেন, কিছু বলা যায় না।” তিনি মনে করেন যে, ট্রাম্পের নীতিগুলি ভারত এবং পাকিস্তানকে প্রভাবিত করতে পারে, যা এই অঞ্চলে আরও বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
ফারুক আবদুল্লার বক্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মুসলিম বিশ্বের নীরবতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যা এই সংঘাতের প্রভাবকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। তিনি মনে করেন যে, এই সংঘাতের ফলে শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্য নয়, বরং পুরো বিশ্ব অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।