পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে (Pakistan) একটি দুঃখজনক ঘটনায় একটি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়েছে, যাতে পাঁচজন ক্রু সদস্য, যার মধ্যে দুজন পাইলট ছিলেন, নিহত হয়েছেন। এই হেলিকপ্টারটি বাজাউর জেলার বৃষ্টি-বিধ্বস্ত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার জন্য উদ্ধার অভিযানে নিয়োজিত ছিল।
প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন গান্দাপুর জানিয়েছেন, মোহমান্দ জেলার পান্দিয়ালি এলাকায় প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় প্রদেশে শনিবারের জন্য একদিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে, এবং জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।খাইবার পাখতুনখোয়া সরকারের এই এমআই-১৭ হেলিকপ্টারটি পেশোয়ার থেকে বাজাউরের দিকে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে যাচ্ছিল।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দুপুরে হেলিকপ্টারটি মোহমান্দ জেলার চঙ্গি বান্দা এলাকায় পৌঁছানোর সময় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। প্রদেশের মুখ্য সচিব শাহাব আলি শাহ জানিয়েছেন, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, হেলিকপ্টারটি বাজাউরের সালারজাই তহসিলের বন্যা-কবলিত এলাকায় ত্রাণ সরবরাহের কাজে নিয়োজিত ছিল। দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে, এবং নিহতদের দেহাবশেষ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন গান্দাপুর এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, “এই ক্রু সদস্যরা অন্যদের জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তারা আমাদের প্রকৃত বীর, এবং তাদের এই ত্যাগ ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।”
তিনি নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তাদের জন্য ধৈর্য কামনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, “উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে কাজ করছে, এবং প্রদেশের অন্য একটি হেলিকপ্টার বুনের জেলায় ত্রাণ কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে।”
এই দুর্ঘটনা ঘটেছে এমন সময়ে যখন খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে ভারী বর্ষণ, বন্যা, এবং ভূমিধসের কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ) জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রদেশে ১৫০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, এবং শতাধিক আহত হয়েছেন।
বাজাউর, বুনের, এবং মানসেহরার মতো জেলাগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যা ও ভূমিধসের কারণে বহু বাড়িঘর, রাস্তা, এবং সেতু ধ্বংস হয়েছে, এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী, রেসকিউ ১১২২, এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে। এনডিএমএ জানিয়েছে, বুনেরের পির বাবা এলাকায় ৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, এবং বাজাউরে বজ্রপাতে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। প্রদেশে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।
এই দুর্ঘটনা পাকিস্তানে উদ্ধার অভিযানের সময় হেলিকপ্টারের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অতীতে, ২০০৯ এবং ২০১৫ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এমআই-১৭ হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছিলেন। প্রতিকূল আবহাওয়ায় উড়ানের ঝুঁকি এবং রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে তদন্ত জোরদার করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার সঠিক কারণ নির্ধারণের জন্য বিস্তারিত তদন্ত চলছে।
৮৫ কিমি থেকে ১৩০ কিমি রেঞ্জ, লঞ্চ হল Odysse Sun ইলেকট্রিক স্কুটার
এই হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা খাইবার পাখতুনখোয়ার বন্যা-কবলিত এলাকার মানুষের দুর্দশাকে আরও গভীর করেছে। নিহত ক্রু সদস্যদের ত্যাগ দেশের ইতিহাসে স্মরণীয় থাকবে। ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকলেও, সরকারের উপর এখন দায়িত্ব রয়েছে উদ্ধার অভিযানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া জোরদার করা।