মিশরের লুক্সর থেকে এডফুর উদ্দেশে রওনা দেওয়া বিলাসবহুল ক্রুজ জাহাজ (Nile cruise ship) ‘আইবেরোটেল ক্রাউন এমপ্রেস’-এ মঙ্গলবার রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ২৭ অক্টোবর যাত্রা শুরু করা জাহাজটিতে ছিলেন প্রায় ২২০ জন দেশি ও বিদেশি পর্যটক। ভ্রমণের প্রথম দিনেই ঘটে বিপর্যয়।
মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যার দিকে জাহাজের রান্নাঘর থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো নিচতলা ও কয়েকটি কেবিন জুড়ে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওয় দেখা গেছে, নাইল নদীতে ভাসমান জাহাজটি আগুনে পুরোপুরি আচ্ছন্ন হয়ে গেছে, জানালা ভেদ করে শিখা বেরোচ্ছে।
অগ্নিকাণ্ডের মুহূর্তে ক্রু সদস্যরা তৎপরতার সঙ্গে যাত্রীদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যান। সবাইকে জাহাজের উপরতলায় স্থানান্তর করা হয় এবং পরে উদ্ধারকারী দল পৌঁছে সবাইকে নিরাপদে উদ্ধার করে। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কোনও মৃত্যু বা গুরুতর আহতের খবর পাওয়া যায়নি।
একজন ইউরোপীয় যাত্রী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টার দিকে পাশের নৌকা থেকে আলো পড়তে দেখি। জানলা খুলেই বুঝলাম কিছু একটা গণ্ডগোল হয়েছে, তখনই দেখি ডেক জুড়ে আগুন।”
তিনি আরও জানান, “পুরো নিচতলাটা আগুনে ভরে গিয়েছিল। সেখানেই ছিল জাহাজ থেকে নামার রাস্তা। তাই কেউ কেউ নেমে যেতে পারেননি। ছোট ছোট নৌকা এসে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। সবকিছু এত দ্রুত ঘটেছে যে আমরা কিছুই সঙ্গে নিতে পারিনি—লাগেজ, পাসপোর্ট, সবকিছুই জাহাজে ফেলে আসতে হয়েছে।”
সূত্রের খবর, আগুন সম্ভবত রান্নাঘরেই লেগেছিল, যখন কর্মীরা ডিনার করছিলেন। ক্রুদের একাংশের মতে, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকেও আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। প্রাথমিক তদন্তে রান্নাঘরের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করা হচ্ছে।
মিশরের পরিবহন দফতর ও পর্যটন মন্ত্রক যৌথভাবে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি নাইল নদীর সব পর্যটকবাহী ক্রুজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ‘আইবেরোটেল ক্রাউন এমপ্রেস’ পরিষেবা থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নাইল নদী সংলগ্ন অঞ্চলে আগুন লাগার ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি, কারণ অনেক পুরনো ক্রুজে আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। এই ঘটনার পর পর্যটন কর্তৃপক্ষ নতুন নিয়ম চালু করার কথা ভাবছে।
নাইল ক্রুজ মিশরের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ। প্রতিবছর হাজার হাজার বিদেশি পর্যটক এই নদীভ্রমণে যোগ দেন। তবে মঙ্গলবারের এই ঘটনা পর্যটন নিরাপত্তা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। সৌভাগ্যের বিষয়, দ্রুত উদ্ধারকাজের জন্যই এবার বড় দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে।


