ভারত-মায়ানমার সীমান্ত নীতির প্রতিবাদে নাগা সংগঠনের হুঁশিয়ারি, ‘বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা’ বলবৎ

ইম্ফল: মণিপুরে নাগা সম্প্রদায়ের শীর্ষ সংগঠন ইউনাইটেড নাগা কাউন্সিল (UNC) আগামী ৮ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা থেকে ‘ট্রেড এমবার্গো’ বা বাণিজ্য অবরোধ জারির ঘোষণা করেছে। ভারত-মায়ানমার…

India-Myanmar Border Fencing

ইম্ফল: মণিপুরে নাগা সম্প্রদায়ের শীর্ষ সংগঠন ইউনাইটেড নাগা কাউন্সিল (UNC) আগামী ৮ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা থেকে ‘ট্রেড এমবার্গো’ বা বাণিজ্য অবরোধ জারির ঘোষণা করেছে। ভারত-মায়ানমার সীমান্তে (India-Myanmar Border) ফেন্সিং কাজ ও ‘ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম’ (FMR) বাতিলের প্রতিবাদে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংগঠনটি জানিয়েছে, নাগা অধ্যুষিত সেনাপতি, উখরুল, চাঁদেল, তামেংলং, কামজং এবং নোং জেলা জুড়ে এই অবরোধ কার্যকর হবে। এই জেলাগুলির মধ্য দিয়ে চলাচলকারী জাতীয় সড়কগুলিতে পণ্যবাহী ট্রাক ও যানবাহনের চলাচলও বন্ধ থাকবে।

মণিপুরে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মূলত আসামসহ পার্শ্ববর্তী রাজ্য থেকে আসে। সেনাপতি জেলার মধ্য দিয়ে চলা জাতীয় সড়ক ২ (NH-2) রাজ্যের অন্যতম প্রধান সড়ক, যা এই অবরোধে প্রভাবিত হবে। একইসঙ্গে তামেংলং এবং নোং জেলার মধ্য দিয়ে চলা জাতীয় সড়ক ৩৭ (NH-37) -এও এই অবরোধ কার্যকর হবে। ফলে গোটা রাজ্যের জিনিসপত্র সরবরাহে বড় ধাক্কা লাগতে পারে।

   

UNC-র তরফে বুধবার রাতে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “গত ১১ আগস্ট প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিল বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৮ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা থেকে নাগা অধ্যুষিত সমস্ত এলাকায় ট্রেড এমবার্গো কার্যকর করা হবে। সরকারের পরবর্তী ঘোষণা না আসা পর্যন্ত এই অবরোধ জারি থাকবে।”

সংগঠনটি আরও জানিয়েছে, ভারত সরকারকে সীমান্তে বেড়া নির্মাণ এবং FMR বাতিলের বিরুদ্ধে একাধিকবার স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের ১৯ জানুয়ারি থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত নাগা সংগঠনগুলি প্রতিবাদ সভা, জনসমাবেশ, বিক্ষোভ, সংবাদ বিজ্ঞপ্তি—সবকিছুই শান্তিপূর্ণভাবে করেছে। তবু সরকারের উদাসীনতা আন্দোলনের মাত্রা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা তৈরি করেছে।

Advertisements

নাগা সংগঠনগুলির মতে, ভারত-মায়ানমার সীমান্তে প্রায় ৩৯৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা নাগা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যগত ও ঐতিহাসিক ভূমি। বহুদিন ধরেই এই অঞ্চলের মানুষরা দুই দেশের মধ্যে ‘ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম’-এর সুবিধা ভোগ করে আসছিলেন। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দারা পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত অপর দেশে যাতায়াত করতে পারতেন। কিন্তু এই ব্যবস্থা একতরফাভাবে বাতিল হওয়ায় এবং সীমান্তে কঠোর বেড়া তৈরির ফলে স্থানীয় মানুষদের জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে নাগা সংগঠনগুলির দাবি।

UNC-র বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “সরকার নাগা জনগণের মতামতকে অগ্রাহ্য করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই এই অবস্থার প্রতিবাদে বাণিজ্য অবরোধই সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ।” সংগঠনটি নাগা সম্প্রদায়ের প্রত্যেককে এই আন্দোলনে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছে।

এই অবরোধ দীর্ঘায়িত হলে মণিপুরে প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অভাব দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ NH-2 এবং NH-37—এই দুই জাতীয় সড়কই রাজ্যের রসদ সরবরাহের মূল রুট। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্য প্রশাসন ইতিমধ্যেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করছে। তবে নাগা সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, সরকার যদি তাদের দাবি না মানে, অবরোধ প্রত্যাহারের কোনও সম্ভাবনা নেই।