ট্রাম্পের শুল্কে উত্তাল আমেরিকা, মাগা ইনফ্লুয়েন্সারদের ভারতবিরোধী প্রচার

যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলির মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে এক নতুন সুর শোনা যাচ্ছে—ভারত ও ভারতীয় অভিবাসীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য প্রচার। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে ভারতের পণ্যের উপর…

India Should Align With the US, Not Russia: Trump Aide Slams Modi-Putin Meeting"

যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলির মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে এক নতুন সুর শোনা যাচ্ছে—ভারত ও ভারতীয় অভিবাসীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য প্রচার। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে ভারতের পণ্যের উপর মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে একঝাঁক ‘মাগা’ (MAGA – Make America Great Again) ইনফ্লুয়েন্সার (MAGA Influencers) ভারত-বিরোধী প্রচার চালাচ্ছেন। অভিযোগ উঠছে ভারতীয় কর্মী, ছাত্র, এমনকি কল সেন্টারের বিরুদ্ধে।

ফক্স নিউজ সঞ্চালিকা লরা ইঙ্গ্রাহাম সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন— “ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি মানে আরও বেশি ভিসা দেওয়া। আমি ভিসা আর বাণিজ্য ঘাটতির বিনিময়ে মূল্য দিতে রাজি নই। মোদীকে বলা হোক তিনি যেন চীনের শর্ত মেনে নেন।”

   

ঠিক একই সুরে চার্লি কার্ক, যিনি টার্নিং পয়েন্টস ইউএসএ নামের একটি রক্ষণশীল সংগঠন পরিচালনা করেন, ভারতীয় পেশাজীবীদের অভিযুক্ত করেছেন আমেরিকান কর্মীদের চাকরি কেড়ে নেওয়ার জন্য। তাঁর ভাষায়, “আমেরিকার আর ভারতের ভিসাধারীর প্রয়োজন নেই। যতটা ক্ষতি ভারতীয় অভিবাসীরা করেছে, আর কেউ করেনি। আমরা ভরপুর। এবার আমেরিকানদের স্বার্থকে আগে রাখতে হবে।”

অন্যদিকে জ্যাক পসোবিয়েক, এক প্রভাবশালী ডানপন্থী পডকাস্টার, দাবি করেছেন ভারতীয় কল সেন্টার ও আউটসোর্সিং শিল্পের উপর শতভাগ শুল্ক বসাতে হবে। তিনি সরাসরি লিখেছেন— “সব কল সেন্টারের উপর শুল্ক বসাও। বিদেশি রিমোট ওয়ার্কারদের শুল্ক দাও। ১০০ শতাংশ শুল্ক।”

২০২৪ সালের মার্কিন নির্বাচনে বহু ভারতীয়-আমেরিকান প্রথমবার রিপাবলিকানদের ভোট দিয়েছিলেন। ট্রাম্পের জয়ে তাঁদের অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ। অথচ মাত্র কয়েক মাস পরেই ভারতীয়দের লক্ষ্য করে বর্ণবিদ্বেষমূলক বক্তব্য তাঁদের মধ্যে প্রবল অসন্তোষ তৈরি করেছে। অনেক রিপাবলিকান সমর্থকই ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছেন, অভিবাসন সীমিত করা প্রয়োজন হতে পারে, কিন্তু প্রকাশ্যে জাতিবিদ্বেষী প্রচার দলকে ক্ষতি করছে।

Advertisements

পত্রিকার কলাম লেখক বিলি বিনিয়ন মন্তব্য করেছেন—এটি মূলত ‘অধিকারবোধ’ বা entitlement থেকে জন্ম নেওয়া প্রচার। তাঁর কথায়, “কিছু রক্ষণশীল কর্মী আসলে পরিশ্রমী অভিবাসীদের প্রতিযোগিতা সহ্য করতে পারেন না। অথচ মেধার ভিত্তিতে প্রতিযোগিতাকে তো আমেরিকার শক্তি বলা হয়।”

ভারতীয়-মার্কিন কংগ্রেসম্যান রো খন্না সরাসরি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আক্রমণ করেছেন। তাঁর মতে, “একজন মানুষের অহংকারের কারণে আমেরিকা-ভারত সম্পর্ক নষ্ট হতে দেওয়া যায় না। চীনের মোকাবিলায় কৌশলগত দিক থেকে ভারতের ভূমিকা অপরিহার্য।”

পরিসংখ্যান বলছে, আমেরিকায় কার্যরত এইচ-১বি ভিসাধারীদের প্রায় ৭৫ শতাংশই ভারতীয়। গুগল, মাইক্রোসফট, অ্যামাজনের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টে তাঁদের অবদান অস্বীকার করা যায় না। অন্যদিকে, ২ লক্ষাধিক ভারতীয় ছাত্র বর্তমানে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন, যা প্রতি বছর কয়েক বিলিয়ন ডলার অর্থনীতিতে যোগ করে। ফলে, বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতীয় অভিবাসনের পথ রুদ্ধ হলে তা শুধু সম্পর্ককেই নয়, বরং মার্কিন প্রযুক্তি ও উচ্চশিক্ষা খাতকেও দুর্বল করে তুলবে।