লেনিনে উত্থান গর্বাচেভের হাতে পতন, নিন্দিত-নন্দিত শেষ সোভিয়েত প্রধান প্রয়াত

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: ১৯৯১ সালে যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন (Soviet Union) ভেঙে গেল বিশ্ব জুড়ে কমিউনিস্ট আদর্শের আকাশচুম্বি গর্ব এক নিমেষে মিশে গেছিল জনপ্লাবনে। ক্রেমলিন থেকে বিখ্যাত…

প্রসেনজিৎ চৌধুরী:
১৯৯১ সালে যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন (Soviet Union) ভেঙে গেল বিশ্ব জুড়ে কমিউনিস্ট আদর্শের আকাশচুম্বি গর্ব এক নিমেষে মিশে গেছিল জনপ্লাবনে। ক্রেমলিন থেকে বিখ্যাত লাল পতাকা নামিয়ে নবগঠিত রাশিয়ার (Russia) তেরঙা পতাকা (সাদা-নীল-লাল) উড়ল। সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব স্তম্ভিত। প্রবল উল্লসিত ধনতান্ত্রিক দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ কেন্দ্র আমেরিকা। সেই ঐতিহাসিক ভাঙন মুহূর্তে একদিকে নিন্দিত হচ্ছিলেন সোভিয়েত জমানার শেষ প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ (Mikhail Gorbachev), কী আশ্চর্য! তিনি আবার প্রশংসিতও। অন্তত ধনতান্ত্রিক দেশগুলির কাছে। ৯১ বছরে প্রয়াত গর্বাচেভ।

রুশ রাজতন্ত্র ‘জার’ কে হটিয়ে শ্রমিক-কৃষকদের নেতৃত্বে কমিউনিস্ট বলশেভিক পার্টি রাশিয়ার ক্ষমতা দখল করেছিল ১৯১৭ সালে। সেই শুরু সোভিয়েত ইউনিয়নের। পরাধীন ভারতের স্বাধীনতার জন্য দরাজ হাত বাড়িয়ে দেওয়া ভারতবন্ধু এই সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রটির প্রথম শাসক ছিলেন লেনিন। দ্বিতী়য় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি হামলাকে পরাজিত করার মূল দাবিদার সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আমেরিকার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী।

এমনই শক্তিশালী সোভিয়েতের শাসক পদে মিখাইল গর্বাচেভ এসেছিলেন ১৯৮৫ সালে। রুশ কমিউনিস্ট পার্টির সর্বোচ্চ নেতা ও প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়া গর্বাচেভ ‘পেরেস্ত্রোইকা’ ও ‘গ্লাসনস্ত’ নামে উদারীকরণের যে দুটি কর্মসূচি রূপায়ন করতে গিয়ে একাধারে নিন্দিত ও নন্দিত হন। উদারিকরণের সেই ধাক্কায় ১৯৯১ সালে পতন হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের। আলাদা আলাদা ১৫টি রাষ্ট্র গড়ে ওঠে। তার মধ্যে বড়টি হল আজকের রাশিয়া।

১৯৩০ সালে সোভিয়েত ভ্রমণ করে মুগ্ধ রবীন্দ্রনাথ ‘রাশিয়ার চিঠি’তে লিখেছেন, “রাশিয়ায় অবশেষে আসা গেল। যা দেখছি আশ্চর্য ঠেকছে। অন্য কোনো দেশের মতোই নয়। একেবারে মূলে প্রভেদ। আগাগোড়া সকল মানুষকেই এরা সমান করে জাগিয়ে তুলেছে। “

এই বইতেই তিনি আবার লিখেছেন, “এর মধ্যে যে গলদ কিছুই নেই, তা বলি নে-গুরুতর গলদ আছে। সেজন্য একদিন এদের বিপদ ঘটবে। সংক্ষেপে সে গলদ হচ্ছে, শিক্ষাবিধি দিয়ে এরা ছাঁচ বানিয়েছে-কিন্তু ছাঁচে-ঢালা মনুষ্যত্ব কখনো টেঁকে না-….”

রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে টানা সত্তর বছর আলোড়ন ফেলা সোভিয়েতের যেদিন পতন হলো সেদিন রবীন্দ্রনাথের বিশ্লেষণ ছিল বিশেষ আলোচিত।

সেই অবলুপ্ত সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বশেষ নেতা মিখাইল গর্বাচেভ প্রয়াত। ৯১ বছর বয়সে মঙ্গলবার। মস্কোর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। রুশ সংবাদ সংস্থা তাস জানাচ্ছে গর্বাচেভের প্রয়াণ সংবাদে বিভিন্ন দেশের তরফে আসছে শোকবার্তা। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় হবে শেষ অনুষ্ঠান।