পাক-প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিপজ্জনক হুঁশিয়ারি,- ‘বাঁচতে না পারলে কেউ বাঁচবে না’

পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ (Khawaja Asif) সর্বশেষ বক্তব্যে ভারতকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।…

Khawaja Asif Warning

পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ (Khawaja Asif) সর্বশেষ বক্তব্যে ভারতকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “যদি ভারত পাকিস্তানের উপর আক্রমণের সাহস করে এবং পাকিস্তানের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়, তবে এই পৃথিবীতে কেউ বেঁচে থাকবে না।” এই হুঁশিয়ারির মাধ্যমে তিনি ভারতের আক্রমণাত্মক অবস্থানের সঙ্গে ইসরায়েলের গাজায় সামরিক অভিযানের তুলনা করেছেন। আসিফ বলেন, “ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যে মানসিকতা প্রয়োগ করেছেন, ভারতও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একই অবস্থান নিয়েছে। যদি আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়, তবে হয় আমরা বাঁচব, নয় কেউ বাঁচবে না।” এই মন্তব্য উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনাকে আরও তীব্র করেছে।

পহেলগাঁও হামলা ও ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা

২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বাইসারান মেডোতে জঙ্গিরা পর্যটকদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়, যাতে ২৬ জন নিহত হন, যার মধ্যে ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালি নাগরিক ছিলেন। এই হামলা গত দুই দশকের মধ্যে কাশ্মীরে বেসামরিক নাগরিকদের উপর সবচেয়ে মারাত্মক হামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ভারত দাবি করেছে, পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার একটি শাখা দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) এই হামলার জন্য দায়ী। যদিও টিআরএফ প্রাথমিকভাবে হামলার দায় স্বীকার করেছিল, পরে তারা এই দাবি প্রত্যাহার করে। পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং হামলার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।

   

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এর আগে সতর্ক করে বলেছিলেন, ভারত যে কোনও মুহূর্তে কাশ্মীরের লাইন অফ কন্ট্রোল (এলওসি) বরাবর সামরিক হামলা চালাতে পারে। তিনি ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের কাছে খবর রয়েছে যে ভারত এলওসি বরাবর যে কোনও স্থানে আঘাত হানতে পারে। নয়াদিল্লিকে যথাযথ জবাব দেওয়া হবে।” তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ পহেলগাঁও ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে এটা প্রকাশ পায় যে ভারত নিজেই এই হামলার সঙ্গে জড়িত কি না, নাকি এটি কোনও অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীর কাজ।

পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং সামরিক বাহিনী ভারতের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের হুমকির পর থেকে ক্রমাগত সতর্কবার্তা জারি করছে। গত সপ্তাহে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আত্তাউল্লাহ তারার বলেছিলেন, পরবর্তী ২৪-৩৬ ঘণ্টা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ভারত সম্ভবত সামরিক হামলা চালাতে পারে। যদিও সেই সময় অতিক্রান্ত হয়েছে এবং ভারতের পক্ষ থেকে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, পাকিস্তানের উদ্বেগ কমেনি।

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনিরও সোমবার জানিয়েছেন, তিনি দেশের “জাতীয় গৌরব এবং সমৃদ্ধি” রক্ষার জন্য পূর্ণ শক্তি দিয়ে জবাব দেবেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী যে কোনও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রস্তুত। এই বক্তব্য পাকিস্তানের সামরিক প্রস্তুতি এবং দৃঢ় অবস্থানের ইঙ্গিত দেয়।

ভারতের প্রতিক্রিয়া এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর অঙ্গীকার

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পহেলগাঁও হামলার পর কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভারত জঙ্গিদের এবং তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে “দৃঢ় এবং নিষ্ঠুর” পদক্ষেপ নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মোদী দেশের শীর্ষ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের হামলার জবাব দেওয়ার জন্য পদ্ধতি, লক্ষ্য এবং সময় নির্ধারণে “সম্পূর্ণ অপারেশনাল স্বাধীনতা” দিয়েছেন।

ভারত ইতিমধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ইন্দাস জল চুক্তি স্থগিত করা, অটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করা এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের স্তর হ্রাস করা। এছাড়া, ভারত পাকিস্তানি বিমানের জন্য নিজের আকাশসীমা বন্ধ করেছে এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের ভারত ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। এই পদক্ষেপগুলি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও তিক্ত করেছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এবং উদ্বেগ

পহেলগাঁও হামলা এবং এর পরবর্তী উত্তেজনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেছেন। তিনি উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শন এবং সংঘাত এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওও দুই দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, পাকিস্তানকে হামলার তদন্তে সহযোগিতা করতে এবং উভয় পক্ষকে উত্তেজনা কমাতে বলেছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পহেলগাঁও হামলার নিন্দা করেছে এবং ভারতের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। তবে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শরিফ ভারতের অভিযোগকে “উসকানিমূলক” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রভাব

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা দুই দেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলছে। পাকিস্তানের শেয়ার বাজারে তীব্র পতন দেখা গেছে, যেখানে কেএসই-১০০ সূচক ২,২০৬ পয়েন্ট হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া, পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিত করেছে, যা ২০২৪ সালে ১.২ বিলিয়ন ডলারের ছিল। ভারতও পাকিস্তানি জাহাজের জন্য বন্দর বন্ধ করেছে।

পহেলগাঁও হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা একটি বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। খাজা আসিফের সর্বশেষ হুঁশিয়ারি এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর কঠোর অঙ্গীকার এই অঞ্চলে সংঘাতের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলেছে। দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের এই দ্বন্দ্ব শুধু দক্ষিণ এশিয়ার নয়, বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ এবং উভয় দেশের সংযম এই সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ হবে।

Advertisements