কাঠমান্ডু: দাউদাউ করে জ্বলছে কাঠমান্ডুর উচ্চতম হোটেল হিলটন। রবিবার রাতেও যেখানে ছিল অতিথিদের আনাগোনা, রোশনাই-এ হিলটনকে দেখার জন্য যেখানে ঘাড় উঁচু করতে হত, আজ সেটিকে দেখে এক দগ্ধ কংক্রিটের দৈত্য বলে মনে হচ্ছে। জানলার ভাঙ্গা কাঁচগুলো বিপজ্জনকভাবে ঝুলছে। ভবনের ফাঁক-ফোঁকর গলে এখনও বেরচ্ছে কালো ধোঁয়ার কুন্ডলি।
গত বছর জুলায় মাসেই উদ্বোধন হয়েছিল কাঠমান্ডুর ২১০ ফিট উঁচু বিলাসবহুল হোটেল হিলটন। কিন্তু একশো মিটার দুরত্বেও যেখানে অন্যান্য ছোটখাট হোটেল অক্ষত আছে, সেখানে হিলটনের এমন পরিণতি হল কেন? ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ত্রিভুবন বিমানবন্দরের কাছেই সবরকম আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন হোটেল হিলটনের উদ্বোধন করেছিলেন নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি। মোট ১৭৬ টি রুম এবং একাধিক বিলাসবহুল সুইট রুম বিশিষ্ট হোটেলটি তৈরি করতে প্রায় ৮০০ কোটি টাকায় তৈরি হয়।
কাঠমান্ডুর প্রাণকেন্দ্রে হোটেলটি নির্মাণ করে শঙ্কর গ্রুপ। তবে নেপালের কিছু সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর বেউবার পুত্র এবং স্ত্রী সহ নেপালের প্রাক্তন বিদেশ মন্ত্রী ডঃ আরজু রানা দেউবা হিলটন হোটেলের শ্তেক কেনেন বলে কানাঘুষো শোনা যায়। আমজনতার করের টাকায় নেতামন্ত্রীরা দশকের পর দশক ধরে নিজেদের বিষয় সম্পত্তি বাড়িয়ে আসছে বলে ক্ষোভে ফুঁসছিল নেপালের মানুষ। যার রেশ গিয়ে পড়ে হিলটন হোটেলেও।
উত্তেজিত জনতা বিলাসবহুল হোটেলটিতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। একই ঘটনা ঘটেছে পোখরার একটি হোটেলেও। পোখরার সবচেয়ে বড় পাঁচতারা হোটেলটিতেও আগুন লাগিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। অথিতিদের বেরনোর জন্য ৫ মিনিট সময় দেন তাঁরা। তারপরেই একের পর এক সিলিন্ডার বিস্ফোরণ করে হোটেলটিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। জানা গিয়েছে, ওই হোটেলটিও কোনও নেতা-মন্ত্রীর টাকায় তৈরি হয়েছিল।
সরকারের দুর্নীতি, স্বজনপোষণের পর সমাজমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ায় নেপালের জনগণের ক্ষোভে ঘৃতাহুতি পড়ে। সোমবার শুরু হওয়া প্রতিবাদে পুলিশের গুলিতে প্রায় ২০ জন যুবক মারা গেলে বিক্ষোভ ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় দেশের পার্লামেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির বাসভবন, আদালত সহ অন্যান্য সরকারি অফিস, ভবন। সেনার পরোক্ষ নির্দেশে পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রতিবাদীদের মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৩২ বলে জানা গিয়েছে।