Pakistan Mosque Blast: মসজিদে বিস্ফোরণের নিন্দা জমিয়ত উলামা-ই-ইসলামের

পাকিস্তানের (Pakistan) খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে শুক্রবার জুমার নামাজের সময় একটি মসজিদে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় জমিয়ত উলামা-ই-ইসলাম (জেইউআই) তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এই বিস্ফোরণে জেইউআই-এর…

Pakistan Mosque Blast

short-samachar

পাকিস্তানের (Pakistan) খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে শুক্রবার জুমার নামাজের সময় একটি মসজিদে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় জমিয়ত উলামা-ই-ইসলাম (জেইউআই) তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এই বিস্ফোরণে জেইউআই-এর জেলা প্রধান মৌলানা আবদুল্লাহ নাদিম গুরুতর আহত হয়েছেন এবং আরও তিনজন সামান্য আঘাত পেয়েছেন। দলটি এই ঘটনাকে রমজান মাসে মসজিদের পবিত্রতা লঙ্ঘনের একটি দুঃখজনক ও নিন্দনীয় কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। জেইউআই-এফ প্রধান মৌলানা ফজলুর রহমান সরকারের কাছে খাইবার পাখতুনখোয়া এবং বেলুচিস্তানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য জরুরি হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।

   

জেইউআই এক বিবৃতিতে বলেছে, “মৌলানা ফজলুর রহমান দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে মসজিদে বিস্ফোরণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। পবিত্র রমজান মাসে এবং মসজিদের পবিত্রতা লঙ্ঘন করে এই বিস্ফোরণ সংঘটিত হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। সরকার ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাতিকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে আশ্বস্ত করতে হবে, বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখোয়া এবং বেলুচিস্তানে। সংসদের উভয় কক্ষে কেপি এবং বেলুচিস্তানের অশান্তি জনিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো উপেক্ষিত হচ্ছে। আল্লাহ মৌলানা আবদুল্লাহ নাদিম এবং অন্যান্য আহতদের দ্রুত আরোগ্য দান করুন।” এই বার্তাটি দলটি এক্স-এ পোস্ট করেছে।

Also Read | প্রার্থনার সময় পাকিস্তানের মসজিদে আইইডি বিস্ফোরণ! বহু মৃত্যুর আশঙ্কা 

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুর ১:৪৫ মিনিটে (স্থানীয় সময়) দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের আজম ওয়ারসাক বাইপাস রোডে অবস্থিত মৌলানা আবদুল আজিজ মসজিদে একটি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণ ঘটে। এই ডিভাইসটি মসজিদের মিম্বরে লুকানো ছিল। জেলা পুলিশ অফিসার আসিফ বাহাদার ডন পত্রিকাকে জানিয়েছেন, “বিস্ফোরণে জেইউআই-এর জেলা প্রধান আবদুল্লাহ নাদিম গুরুতর আহত হয়েছেন। আরও তিনজন, যারা জেইউআই-এর সদস্য, সামান্য আঘাত পেয়েছেন।” আহতদের মধ্যে রেহমানুল্লাহ, মোল্লা নূর এবং শাহ বেহরানের নাম পুলিশের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাহাদার আরও জানান, আহতদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রমাণ সংগ্রহ করছে এবং তদন্ত চলছে।” এখনও পর্যন্ত কোনও গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে মসজিদগুলো, বিশেষ করে জুমার নামাজের সময় যখন বড় জমায়েত হয়, খাইবার পাখতুনখোয়ায় আগেও এভাবে লক্ষ্যবস্তু হয়েছে।

গত মাসে খাইবার পাখতুনখোয়ার নওশেরা জেলায় দারুল উলুম হাক্কানিয়া মাদ্রাসায় একটি আত্মঘাতী বিস্ফোরণে জেইউআই-এস নেতা মৌলানা হামিদুল হক হাক্কানিসহ ছয়জন নিহত এবং ১৫ জন আহত হয়েছিলেন। এই ঘটনাও শুক্রবারের নামাজের সময় সংঘটিত হয়েছিল। এই ধরনের হামলা প্রমাণ করে যে, ধর্মীয় স্থান এবং নেতারা উগ্রপন্থীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে। জেইউআই-এর নেতারা বারবার এই ধরনের হামলার নিন্দা জানিয়ে সরকারের কাছে কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়ে আসছেন।

জেইউআই-এর বিবৃতিতে খাইবার পাখতুনখোয়া এবং বেলুচিস্তানে ক্রমবর্ধমান অশান্তি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। দলটি অভিযোগ করেছে যে, পাকিস্তানের সংসদে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো উপেক্ষিত হচ্ছে। সম্প্রতি এই দুই প্রদেশে সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই সপ্তাহের শুরুতে বেলুচিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদী উগ্রপন্থীরা জাফর এক্সপ্রেস ট্রেন হাইজ্যাক করে যাত্রীদের জিম্মি করেছিল, যা একদিনব্যাপী সংঘর্ষে পরিণত হয়েছিল। এই ঘটনায় অন্তত ২৬ জন জিম্মি এবং চারজন নিরাপত্তা কর্মী নিহত হয়েছেন।

পাকিস্তান সরকারের দাবি, ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই ধরনের হামলা বেড়েছে। তারা অভিযোগ করেছে যে, তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর মতো গোষ্ঠীগুলো আফগান ভূখণ্ড ব্যবহার করে পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে। জেইউআই-এর নেতারা এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে বলেছেন, জনগণের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ প্রয়োজন।

দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের এই বিস্ফোরণ স্থানীয় জনগণের মধ্যে ভয় এবং উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। রমজান মাসে মসজিদের মতো পবিত্র স্থানে হামলা সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই ধরনের ঘটনা তাদের দৈনন্দিন জীবনে নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি বাড়িয়ে তুলছে। অনেকে সরকারের কাছে কঠোর ব্যবস্থা এবং সন্ত্রাসবাদের মূলোৎপাটনের দাবি জানিয়েছেন।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে প্রমাণ সংগ্রহ করছে এবং বিস্ফোরণের কারণ ও দায়ীদের চিহ্নিত করতে তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, জেইউআই নেতা আবদুল্লাহ নাদিমই এই হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিলেন। তবে এখনও কোনও সংগঠন দায় স্বীকার না করায় তদন্তের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

জেইউআই-এর নেতারা এই ঘটনাকে কেবল একটি বিচ্ছিন্ন হামলা হিসেবে দেখছেন না, বরং এটিকে খাইবার পাখতুনখোয়া এবং বেলুচিস্তানে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতার একটি অংশ হিসেবে বিবেচনা করছেন। তারা সরকারের কাছে জাতীয় ও প্রাদেশিক পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের মসজিদে এই বিস্ফোরণ পাকিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতির ভঙ্গুরতাকে আরও একবার সামনে এনেছে। জেইউআই-এর নিন্দা এবং সরকারের প্রতি তাদের দাবি এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত দেয়। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করা হচ্ছে এবং সেই সঙ্গে আশা করা হচ্ছে যে, তদন্তের মাধ্যমে এই হামলার পেছনের কারণ উদঘাটিত হবে।