ভারতের বিদেশমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর (Jaishankar) এবং চীনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন, সীমান্তে শান্তি বজায় রাখা এবং ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের জন্য চীনের জিজাং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে মাউন্ট গাং রেনপোচে এবং মাপাম ইউন ত্সো হ্রদে তীর্থযাত্রা পুনরায় শুরুর বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে।
এই বৈঠক ভারত-চীন সম্পর্কের উন্নতির গতিকে আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করেছে।চীনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, “আমরা সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছি এবং ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের জন্য জিজাং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে মাউন্ট গাং রেনপোচে এবং মাপাম ইউন ত্সো হ্রদে তীর্থযাত্রা পুনরায় শুরু করেছি।
আমরা হস্তক্ষেপ দূর করে, সহযোগিতা সম্প্রসারণ করে এবং ভারত-চীন সম্পর্কের উন্নতির গতিকে আরও শক্তিশালী করার জন্য আত্মবিশ্বাস ভাগ করে নিয়েছি। যাতে আমরা আমাদের নিজ নিজ পুনর্জননের পথে এগিয়ে যাওয়ার সময় একে অপরের সাফল্যে অবদান রাখতে পারি এবং এশিয়া ও বিশ্বের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় নিশ্চয়তা প্রদান করতে পারি।”
এই বৈঠক ভারত-চীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, বিশেষ করে ২০২০ সালের গালওয়ান উপত্যকার সংঘর্ষের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে। ওয়াং ই-র বক্তব্যে সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার উপর জোর দেওয়া হয়েছে, যা ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) বরাবর সাম্প্রতিক সময়ে উভয় দেশের মধ্যে সামরিক ও কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা চলছে, এবং এই বৈঠক সেই প্রক্রিয়ার একটি অংশ।মাউন্ট গাং রেনপোচে (কৈলাস পর্বত) এবং মাপাম ইউন ত্সো (মানস সরোবর) হিন্দু, বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মাবলম্বীদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র তীর্থস্থান।
২০২০ সালে সীমান্ত উত্তেজনার কারণে এই তীর্থযাত্রা বন্ধ হয়ে যায়, যা ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল। এই বৈঠকে তীর্থযাত্রা পুনরায় শুরুর ঘোষণা ভারত-চীন সম্পর্কে ইতিবাচক অগ্রগতির ইঙ্গিত দেয়। এই পদক্ষেপকে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কূটনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জয়শঙ্কর এবং ওয়াং ই-র বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং জনগণের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধি। ভারত এবং চীন বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতি এবং জনসংখ্যার দেশ হিসেবে এশিয়া ও বিশ্ব মঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ওয়াং ই-র বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে, দুই দেশের পুনর্জননের প্রক্রিয়ায় একে অপরের সাফল্যে অবদান রাখার মাধ্যমে এশিয়ার স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে অবদান রাখা সম্ভব।
এই বক্তব্য ভারত-চীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে।এক্স প্ল্যাটফর্মে এই বৈঠক নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “ভারত-চীন সম্পর্কে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে এই বৈঠকের মাধ্যমে। তীর্থযাত্রা পুনরায় শুরু এবং সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি ইতিবাচক পদক্ষেপ।”
তবে, কিছু পোস্টে সতর্কতার সুরে বলা হয়েছে যে, সীমান্তে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি নিশ্চিত করতে আরও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন।রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বৈঠক ভারত-চীন সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। সীমান্তে শান্তি বজায় রাখা এবং তীর্থযাত্রা পুনরায় শুরু ভারতের জনগণের কাছে একটি ইতিবাচক বার্তা।
মানসিক স্বাস্থ্য সমীক্ষার আড়ালে NRC চক্রান্তের দাবি মমতার
তবে, বাণিজ্য ভারসাম্য, সীমান্ত নিরাপত্তা এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে আরও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। এই বৈঠকের ফলাফল এবং ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক আলোচনার দিকে সবার দৃষ্টি রয়েছে।