কুয়েটা, ২৪ সেপ্টেম্বর:বালুচিস্তানের মাস্তুঙ্গ জেলার দাস্ত এলাকায় একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণে জাফর এক্সপ্রেস (Jafar Express Blast) ট্রেনের ট্র্যাকে আঘাত লাগে, যার ফলে ট্রেনটি পথভ্রষ্ট হয়ে একাধিক কামরা উল্টে যায়। কমপক্ষে তিনটি কামরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আটকা পড়া যাত্রীদের, বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের, উদ্ধার করতে রেসকিউ টিমরা কাজ করে চলেছে।
এই ঘটনায় চারজন আহত হয়েছেন বলে প্রাথমিক রিপোর্ট এসেছে, তবে মৃতের সংখ্যা নিয়ে এখনও নিশ্চিত তথ্য নেই। পাকিস্তান রেলওয়ে স্পোক্সপারসন জানিয়েছেন, ট্রেনে প্রায় ২৭০ যাত্রী ছিলেন, যা পেশোয়ার থেকে কুয়েটার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। ঘটনাস্থলে পৌঁছানো স্থানীয় সাংবাদিকদের ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, বিস্ফোরণের ফলে ট্র্যাকের একটি বড় অংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে এবং ট্রেনের চার থেকে ছয়টি কামরা উল্টে গেছে।
বিস্ফোরণটি একটি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) দিয়ে ট্র্যাকে রাখা হয়েছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। রেসকিউ টিমরা ক্রেন এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে আটকা পড়া যাত্রীদের বের করার চেষ্টা করছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, আহতদের কাছাকাছি হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে এবং ঘটনাস্থলে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বালুচ রিপাবলিকান গার্ডস (বিআরজি) নামক বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেছে, বলেছে যে তারা পাকিস্তানী সেনাদের লক্ষ্য করে আইইডি বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
জাফর এক্সপ্রেস, যা পাকিস্তান রেলওয়ের একটি দৈনিক যাত্রী ট্রেন এবং কুয়েটা থেকে পেশোয়ারকে সংযুক্ত করে, বারবার সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। এই ঘটনা মার্চ ২০২৫-এর হাইজ্যাকিংয়ের পর আরেকটি বড় আঘাত, যখন বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) ট্রেনটি হাইজ্যাক করে ৪৫০-এর বেশি যাত্রীকে জিম্মি করে নেয় এবং ছয়জন সেনা সদস্যকে হত্যা করে।
গত মাসে একই এলাকায় ছয়টি কামরা পথভ্রষ্ট হয় এবং জুন মাসে জ্যাকোবাবাদে আরেকটি বিস্ফোরণে চারটি কামরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ধারাবাহিক হামলাগুলো বালুচিস্তানের রেলপথের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। রেল মন্ত্রী হানিফ আব্বাসি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, ট্র্যাক মেরামতের কাজ দিনের আলোয় শুরু হবে।
বালুচিস্তান, পাকিস্তানের সবচেয়ে অস্থির অঞ্চলগুলোর একটি, যেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো নিয়মিত সেনা এবং পরিকাঠামোর উপর হামলা চালায়। বিআরজি-র স্পোক্সপারসন দোস্তাইন বালুচ জানিয়েছেন, “আমরা মাস্তুঙ্গের দাস্ত এলাকায় জাফর এক্সপ্রেসকে রিমোট-কন্ট্রোলড আইইডি দিয়ে আঘাত করেছি, যার ফলে কয়েকজন পাকিস্তানী সেনা সদস্য নিহত এবং আহত হয়েছে।”
তারা অভিযোগ করেছে যে, পাকিস্তানী সেনা যাত্রী ট্রেনগুলোকে নিজেদের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে। এই হামলা ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে একই এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে আরেকটি হামলা হয়, যা বালুচিস্তানের ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসের ছবি তুলে ধরে। রেসকিউ অপারেশন চলছে। আহত যাত্রীদের মধ্যে মহিলা এবং শিশুরা রয়েছে, যাদের মধ্যে কেউ কেউ গুরুতর আহত।
স্থানীয় হাসপাতালে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাকিস্তান রেলওয়ে জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে সিকিউরিটি ফোর্সরা এলাকা ঘিরে ফেলেছে এবং খোঁজা অভিযান চালাচ্ছে। ট্রেন সার্ভিস সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে এবং যাত্রীদের বিকল্প ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহলে এই ঘটনা নিরাপত্তা ও পরিকাঠামোর দুর্বলতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।