প্যালেস্টাইনপন্থীদের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড দেশের বাণিজ্য নগরী

italy-milan-pro-palestine-violence-disrupts-city-meloni-government

ইতালির বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র মিলান সম্প্রতি পরিণত হয়েছে সহিংস বিক্ষোভের মঞ্চে। প্যালেস্টাইনপন্থী বিক্ষোভকারীদের (Pro-Palestine Protests ) এক বিশৃঙ্খল ও সহিংস আন্দোলনে শহরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, চরম বামপন্থী কর্মী, অভিবাসী গ্যাং ও বিভিন্ন প্যালেস্টাইনপন্থী গোষ্ঠী মিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। তারা রাস্তায় আগুন জ্বালানো, দোকানপাট ভাঙচুর, যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেওয়াসহ নানা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে।

Advertisements

এই তীব্র সহিংসতার সূত্রপাত হয় ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির এক ঘোষণার পর, যেখানে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে তার সরকার প্যালেস্টাইনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে নয়। মেলোনি এটিকে ‘অপ্রীপক্ক সিদ্ধান্ত’ বলে আখ্যা দেন। তার এই অবস্থান ফ্রান্সের ভিন্নমত পোষণকারী ভূমিকার সম্পূর্ণ বিপরীত, কারণ ফ্রান্স জাতিসংঘে প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়ে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে।

মিলানে এই বিক্ষোভ ইতালি জুড়ে আরও বড় কিছু সমস্যার প্রতিচ্ছবি। অভিবাসননীতি, রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং সাংস্কৃতিক বিভাজনের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিস্ফোরক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দেশটিতে। বহু বছর ধরে ইতালিতে অভিবাসীদের প্রবাহ অব্যাহত থাকলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই ইস্যুটি চরম রাজনৈতিক মেরুকরণ সৃষ্টি করেছে। ডানপন্থী দলগুলো অভিবাসনকে নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে চিত্রায়িত করছে, যেখানে অন্যদিকে অভিবাসী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো সরকারকে বর্ণবৈষম্যমূলক ও বৈষম্যমূলক নীতির জন্য দায়ী করছে।

মেলোনির সরকার অভিবাসন ও নিরাপত্তার প্রশ্নে কঠোর অবস্থান নিয়েছে, যা ইতালির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এক গভীর বিভাজন তৈরি করেছে। তার এই কৌশল অনেকাংশে দেশীয় ভোটারদের সন্তুষ্ট করতে সফল হলেও, প্রবাসী সম্প্রদায় এবং উদারনৈতিক গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করেছে। ফলে, প্যালেস্টাইন-ইসরায়েল ইস্যুর মতো আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গেও সেই অভ্যন্তরীণ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখা যাচ্ছে।

Advertisements

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সহিংসতা আসলে বৃহত্তর এক রাজনৈতিক বাস্তবতার ইঙ্গিত দেয়—যেখানে অভিবাসন, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং অভ্যন্তরীণ বিভাজন একে অপরকে প্রভাবিত করছে। প্যালেস্টাইন ইস্যু কেবল একটি ট্রিগার হিসেবে কাজ করেছে, মূল সমস্যাটি হচ্ছে দেশের ভেতরে তৈরি হওয়া গভীর অসন্তোষ এবং মতাদর্শিক সংঘাত।

মিলান, যা ইতালির বাণিজ্য ও শিল্পের হৃদয়স্থল, সেখানে এমন এক পরিস্থিতির উদ্ভব দেশটির অর্থনীতিতেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। শহরের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ও পরিবহন ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ায় পণ্য সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটেছে, ব্যবসা-বাণিজ্যে থমকে গেছে স্বাভাবিক গতি।

এই পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে, শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক ইস্যু নয়, বরং দেশের অভ্যন্তরে জমে থাকা অসন্তোষ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে বিস্ফোরিত হতে পারে। প্যালেস্টাইনপন্থী আন্দোলনের নামে ঘটে যাওয়া এই সহিংসতা তাই ইতালির রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতাকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।