ইসরায়েল (israel) প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গত পাঁচ দিনের মধ্যে দ্বিতীয়বার ইরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডারকে হত্যা করেছে। ইরানের যুদ্ধকালীন চিফ অফ স্টাফ এবং সর্বোচ্চ সামরিক কর্মকর্তা আলি শাদমানি, যিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ঘনিষ্ঠ সামরিক (israel) উপদেষ্টা হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তেহরানের (israel) কেন্দ্রস্থলে ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর (আইএএফ) একটি নির্ভুল হামলায় নিহত হয়েছেন। এই হামলা ইরানের সামরিক কাঠামোর জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা ইতিমধ্যেই ইসরায়েলের ধারাবাহিক আক্রমণের মুখে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
হামলার বিবরণ
ইসরায়েলি (israel) সামরিক বাহিনীর মুখপাত্রের সূত্রে জানা গেছে, এই হামলা মঙ্গলবার রাতে তেহরানের একটি সক্রিয় কমান্ড সেন্টারে করা হয়। আইডিএফের গোয়েন্দা শাখা থেকে প্রাপ্ত নির্ভুল তথ্যের ভিত্তিতে এই হামলা পরিচালিত হয়, যা আলি শাদমানির অবস্থান নিশ্চিত করেছিল।
এই হামলায় শাদমানি ছাড়াও ইরানের (israel) সামরিক বাহিনীর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরাও নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আইডিএফের দাবি, শাদমানি ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর ‘খাতেম আল-আনবিয়া’ জরুরি কমান্ডের প্রধান ছিলেন এবং তিনি ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) এবং নিয়মিত ইরানি সেনাবাহিনীর সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
আলি শাদমানির ভূমিকা
আলি শাদমানি (israel) ইরানের সামরিক কৌশলের একজন প্রধান স্থপতি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের আক্রমণ পরিকল্পনায় সরাসরি ভূমিকা পালন করেছিলেন। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শাদমানি শুধু একজন জেনারেল ছিলেন না, তিনি ছিলেন ইরানের আক্রমণাত্মক কৌশলের মূল পরিকল্পনাকারী।
তাঁর মৃত্যু ইরানের সামরিক কমান্ড কাঠামোর জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। শাদমানি এই মাসের শুরুতে তাঁর পূর্বসূরি আলম আলি রশিদের মৃত্যুর পর এই গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন, যিনি ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’-এর প্রথম হামলায় নিহত হয়েছিলেন।
ইরানের প্রতিক্রিয়া (israel)
ইরানের সরকারি গণমাধ্যম এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং ইসরায়েলের (israel) বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই হামলায় বেসামরিক নাগরিকদেরও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে শিশুরাও রয়েছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি একটি টেলিভিশন বক্তৃতায় বলেছেন, ইরানের সশস্ত্র বাহিনী এই হামলার জবাবে কঠোর পদক্ষেপ নেবে এবং ইসরায়েলকে “অসহায়” করে দেবে। ইরান ইতিমধ্যেই ইসরায়েলের দিকে বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যার মধ্যে কিছু ইসরায়েলের আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করেছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
ইসরায়েলের কৌশল
ইসরায়েলের (israel) এই হামলা তাদের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে পরিচিত সামরিক অভিযানের একটি অংশ, যার লক্ষ্য ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি এবং সামরিক পরিকাঠামো ধ্বংস করা। আইডিএফ জানিয়েছে, তারা তেহরানে অবস্থিত ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দফতর, এসপিএনডি পারমাণবিক প্রকল্পের সদর দফতর এবং নাতাঞ্জে অবস্থিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়েছে।
আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) নিশ্চিত করেছে যে, নাতাঞ্জে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। ইসরায়েলের দাবি, এই হামলাগুলো ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ক্ষমতাকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েলের প্রধান মিত্র, প্রাথমিকভাবে এই হামলায় অংশগ্রহণ থেকে নিজেদের দূরে রাখার কথা জানালেও পরবর্তীতে ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলার বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে সহায়তা করেছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এই পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য জি৭ সম্মেলনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বিবেচনা করছে।
ইরানের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি
ইরানের অভ্যন্তরে এই হামলা ব্যাপক অশান্তি সৃষ্টি করেছে। তেহরানে ধোঁয়া এবং ধ্বংসাবশেষের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হামলায় বেসামরিক অবকাঠামো, বিমানবন্দর এবং গ্যাস ক্ষেত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইরানের জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং সরকারের প্রতি ক্ষোভ বাড়ছে। কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, এই ধরনের ধারাবাহিক হামলা ইরানের শাসন ব্যবস্থাকে অভ্যন্তরীণভাবে দুর্বল করে দিতে পারে(israel)।
ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি
ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলের তেল আবিব, হাইফা এবং পেতাহ তিকভার মতো শহরগুলোতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১১ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন এবং বেশ কয়েকটি ভবন ধ্বংস হয়েছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানকে “ভারী মূল্য” দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে “গুরুতর ক্ষতি” করেছে।
তৃণমূলের বড় ধাক্কা, ঘাটালে বিজেপিতে পঞ্চায়েত প্রতিনিধি
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই হামলা এবং পাল্টা হামলা মধ্যপ্রাচ্যে একটি বৃহত্তর সংঘাতের সূচনা করতে পারে। ইরানের প্রক্সি গোষ্ঠীগুলো, যেমন হেজবুল্লাহ এবং হুথি বিদ্রোহীরা, এখনও পর্যন্ত এই সংঘাতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়নি। তবে, পরিস্থিতির অবনতি হলে তারা সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে। এদিকে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কূটনৈতিক সমাধানের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে, তবে ইরান এবং ইসরায়েল উভয়ই তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছে।
আলি শাদমানির হত্যা (israel) ইরানের সামরিক নেতৃত্বের জন্য একটি বড় ক্ষতি। ইসরায়েলের (israel) ধারাবাহিক হামলা ইরানের পারমাণবিক এবং সামরিক ক্ষমতাকে দুর্বল করেছে, তবে এটি একটি বিস্তৃত যুদ্ধের ঝুঁকিও বাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন এই সংকট নিরসনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করার জন্য চাপ দিচ্ছে। তবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্তি প্রতিষ্ঠা একটি জটিল চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।