পাকিস্তান আদালতে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ, মৃত ৯, আহত ২১

ইসলামাবাদ: পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ডিস্ট্রিক্ট জুডিশিয়াল কমপ্লেক্সে ভয়াবহ আত্মঘাতী বিস্ফোরণ (Islamabad suicide blast)৷ ঘটনায় ৯ জন নিহত এবং অন্তত ২১ জন আহত হয়েছেন। আহতদের অধিকাংশই সাধারণ নাগরিক, যারা আদালতে শুনানির জন্য এসেছিলেন কিংবা পথচারী হিসেবে ওই চত্বরে উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের সরকারি সংবাদমাধ্যম।

Advertisements

প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, বোমাটি একটি গাড়ির মধ্যে রাখা হয়েছিল৷ বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই শক্তিশালী ছিল যে শব্দ শোনা যায় শহরের একাধিক এলাকায়। মুহূর্তেই ধোঁয়া-ধুলোয় ঢেকে যায় আদালতের সামনের অংশ। বিস্ফোরণের অভিঘাতে কাঁচ, ধাতব অংশ এবং গাড়ির ভাঙা টুকরো ছিটকে পড়ে কয়েকশো মিটার দূর পর্যন্ত। অন্তত ৬ থেকে ৭টি গাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে এবং আরও বহু যান আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

   

ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “শুনানির জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম, হঠাৎ বিকট শব্দে মাটি কেঁপে ওঠে। চোখের সামনে আগুনের গোলা দেখে সবাই ছোটাছুটি শুরু করে। বহু মানুষ রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে ছিলেন। মনে হচ্ছিল যেন যুদ্ধক্ষেত্র!”

বিস্ফোরণের পর সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ, রেঞ্জার্স বাহিনী, বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াড এবং উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। আদালত চত্বর ঘিরে ফেলা হয়, আহতদের অ্যাম্বুলেন্সে করে নিকটবর্তী পলিক্লিনিক হাসপাতাল ও পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস (PIMS)-এ পাঠানো হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে, কারণ অন্তত ৫ জন আহতের অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক।

ইসলামাবাদ পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত চলছে। বিস্ফোরকটি গাড়িতে আগেই রাখা হয়েছিল না কি রিমোট ডিভাইসের মাধ্যমে সক্রিয় করা হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এখনও কোনও জঙ্গি সংগঠন হামলার দায় স্বীকার করেনি। বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানে সক্রিয় একাধিক সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর মধ্যে পাকিস্তান তালিবান (টিটিপি) আবার নাশকতামূলক কার্যকলাপে সক্রিয় হয়ে উঠছে, ফলে এই হামলার যোগসূত্র সেদিকেই ইঙ্গিত করছে।

Advertisements

এই বিস্ফোরণের আগেও মঙ্গলবারই আরও এক সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা বানচাল করে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী। সোমবার রাতে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের ওয়ানা শহরে সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি ক্যাডেট কলেজে এক আত্মঘাতী গাড়ি বোমা ঢোকানোর চেষ্টা করে ৬ জন সশস্ত্র জঙ্গি। নিরাপত্তা বাহিনীর দ্রুত তৎপরতায় সেই হামলা ব্যর্থ হয়। সেনা বাহিনীর মতে, এই হামলায় পাকিস্তান তালিবানের হাত থাকার প্রমাণ মিলেছে।

বিস্ফোরণের পরেই দেশজুড়ে জারি করা হয়েছে হাই অ্যালার্ট। আদালত, সরকারি দপ্তর, রেল স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। প্রবেশপথে কড়া তল্লাশি চলছে, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। তাঁরা এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই চলবেই। নিহতদের পরিবারকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে এবং দোষীদের দ্রুত শনাক্ত করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।”