সুজানা ইব্রাহিম মোহনা, দোহা: ঈদের রেশ এখনো কাটেনি। আরও অন্তত চারদিন থাকবে। একটু আগে আমার ফ্ল্যাটের ব্যালকনি থেকে সূর্যাস্ত দেখলাম। গাঢ় লাল রঙ ছড়িয়েছিল পারস্য উপসাগরে। তারপরেই কালো হয়ে গেল কাতারের উপকূল। ঝিকিঝিকি আলোয় অপূর্ব লাগছে বন্দর থেকে দোহা শহর। ঠিক তখনই মোবাইলে পেলাম ব্রেকিং- চলতি ইরান ও ইজরায়েল সংঘাত পরিস্থিতিতে (Iran-Israel Conflict) কাতার সরকার ঘোষণা করেছে, কোনও অবস্থায় আমেরিকান বিমান বাহিনীকে অবতরণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। পরমুহূর্তে আরও একটা ফ্ল্যাশ-কুয়েত সরকার জানাচ্ছে, তাদের দেশেও কোনও আমেরিকান যুদ্ধ বিমান অবতরণ করতে পারবে না।
অর্থাত পারস্য উপসাগরের দুই কৌশলগত এলাকা কুয়েত ও কাতারের জমি ব্যবহার করে কোনও অবস্থায় ইরানের দিকে হামলা চালাতে পারবে না আমেরিকা। কুয়েতের আমির মিনহাল আল আহমাদ আল জাতের আল শাবাহ (Mishal Al-Ahmad Al-Jaber Al-Sabah) এবং কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানি (Sheikh Tamim bin Hamad Al Thani) একই অবস্থান নেওয়ায় পুরো আরব বিশ্ব তীব্র আলোড়িত।ইজরায়েল-ইরান সংঘর্ষে আমেরিকার সক্রিয় ভূমিকার পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যের দুই বড় দেশ কাতার ও কুয়েত বড় ধাক্কা দিল আমেরিকাকে। মার্কিন সেনার বড় সামরিক ঘাঁটি রয়েছে কাতার ও কুয়েতে। আমেরিকাও দীর্ঘদিন ধরে এই দুটি দেশকে নিরাপত্তা দিয়ে আসছে।
গত দুসপ্তাহ ধরে ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে জল্পনা চলছে শুক্রবার অথবা শনিবারের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হতে পারে। সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেটে হামলার ফলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরম পর্যায়ে চলে যায়। ইরান এই হামলার জন্য ইজরায়েলকে দায়ী করেছে যাতে তাদের একজন শীর্ষ সামরিক কমান্ডার এবং ছয়জন কর্মকর্তা নিহত হয়। ইরানের তরফে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রস্তুতি চলেছে। আমেরিকা ইতিমধ্যেই ইরানকে হুমকি দিয়েছে যে, ইজরায়েলে হামলা চালালে তাকে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে।
এদিকে বিশ্বে ছড়িয়েছে যখন তখন ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হবে ইজরায়েলের উপরে। তাদের মিত্র আমেরিকা প্রবল শঙ্কিত। মার্কিন বিদেশ সচিব ব্লিকেন জরুরি ভিত্তিতে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনা করেছেন, চিন ও রুশ সরকারের সঙ্গে।
উপসাগরের বিখ্যাত হরমুজ প্রণালীতে ইরানের শক্তি বেশি। তারা যে কোনও সময় হরমুজ বন্ধ করে দিলে বিশ্ব তেল রফতানি বাজারে আগুন ধরে যাবে।আর তেল আমদানিকারক দেশ ইজরায়েলের ক্ষেত্রে সেটি হতে চলেছে মারাত্মক আঘাত। মনে হচ্ছে এবার একাধিক আরব দেশ যেমন, সংযুক্ত আমিরশাহী, সৌদি আরব, লেবানন, জর্ডনসহ অন্যান্যরা চিরাচরিত শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব ভুলে ইরানের পাশে থাকতে পারে। শিয়াপন্থী ইরান ও সুন্নিপন্থী আরব দেশগুলি যদি একাসনে এসে যায় তাহলে পরিস্থিতি আমেরিকার জন্য প্রতিকূল হবে বলেই একাধিক মার্কিন সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট।
ইজরালের মার্কিন দূতাবাস তার কর্মচারী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের তেল আবিব, জেরুজালেম এবং বেয়ার শেভার বাইরে ভ্রমণ সীমাবদ্ধ করতে বলেছে। ফ্রান্সের বিদেশ মন্ত্রক ফরাসি নাগরিকদের ইরান, লেবানন, ইসরায়েল এবং প্যাসেস্টাইন অঞ্চলে ভ্রমণের বিরুদ্ধে পরামর্শ দিয়েছে। ভারতসহ আরও দেশ নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের দ্রুত দুতাবাসগুলিতে যোগাযোগ করার নির্দেশ দিয়েছে।