ফের মাশা আমিনির ছায়া, খোলা পোশাকে গান গেয়ে তোপের মুখে ইরানি গায়িকা

আবার মাশা আমিনির ছায়া ইরানে। ইরানি গায়িকা (Iran) পরাস্তু আহমাদি (Parastoo Ahmadi)  এক অনলাইন কনসার্টে হিজাব ছাড়া পারফর্ম করার কারণে আদালতের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। ইরানের…

Iranian Singer Faces Prosecution After Performing Without Hijab In Online Concert

আবার মাশা আমিনির ছায়া ইরানে। ইরানি গায়িকা (Iran) পরাস্তু আহমাদি (Parastoo Ahmadi)  এক অনলাইন কনসার্টে হিজাব ছাড়া পারফর্ম করার কারণে আদালতের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। ইরানের কঠোর পোশাক বিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগে বৃহস্পতিবার ইরানি বিচার বিভাগ ঘোষণা করেছে যে, আহমাদি এবং কনসার্টে অংশগ্রহণকারী উৎপাদন দলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই কনসার্টটি ইউটিউবে সম্প্রচারিত হয়েছিল এবং এতে আহমাদি একটি কালো পোশাকে উর্ধ্বাঙ্গ উন্মুক্ত অবস্থায় পারফর্ম করেন, তিনজন পুরুষ মিউজিশিয়ানের সঙ্গে।

এই পারফরম্যান্সটি সম্ভবত ইরানের একটি ঐতিহ্যবাহী কারাভানসারাইয়ে (প্রাচীন গেস্ট হাউস) ধারণ করা হয়েছিল। ইরানের আইনে, মহিলাদের জনসমক্ষে তাদের চুল ঢাকা বাধ্যতামূলক এবং পাবলিক স্পেসে মহিলাদের একক সঙ্গীত পরিবেশনও নিষিদ্ধ। সুতরাং, আহমাদির এই পারফরম্যান্স ইরানি আইন লঙ্ঘনের কারণে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

   

ইরানে মহিলাদের পোশাক সম্পর্কিত বিধি অত্যন্ত কঠোর। দেশটির ধর্মীয় শাসন ব্যবস্থায়, মহিলাদের জন্য বাধ্যতামূলক হিজাব পরা একটি প্রধান আইন। ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর, ইরানে মহিলাদের জন্য হিজাব পরা বাধ্যতামূলক করা হয় এবং এটির বিরুদ্ধে যে কোনো প্রতিবাদ বা উন্মুক্ত পরিবেশে হিজাব না পরা মারাত্মক পরিণতির কারণ হতে পারে। এর আগে, বহু মহিলা হিজাব পরিধান না করার কারণে গ্রেপ্তার এবং শাস্তির শিকার হয়েছেন।

এছাড়া, ইরানে মহিলাদের একক সঙ্গীত পরিবেশনা বা কনসার্টের জন্য অনুমতি নেই, বিশেষত যখন তারা জনসমক্ষে পরিবেশন করেন। যদিও সোশ্যাল মিডিয়া এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলিতে কিছু নারী গায়িকা তাদের সঙ্গীত পরিবেশন করতে পেরেছেন, তবে তা প্রায়ই ধর্মীয় নীতি ও সরকারী বিধির বিরুদ্ধে পড়ে।

এদিকে, পরাস্তু আহমাদির কনসার্টের এই ঘটনার পর তার সমর্থকরা তাকে সাহসী এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে প্রশংসা করেছেন, এবং তিনি তার পারফরম্যান্সের মাধ্যমে ইরানের সরকারের কঠোর পোশাক বিধি এবং সাংস্কৃতিক সীমাবদ্ধতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তবে, সরকারের পক্ষ থেকে তাকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যা এই ধরণের কাজের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানকে তুলে ধরেছে।

ইরানি সমাজে মহিলাদের অধিকার নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। সেখানকার অনেক নারী হিজাব বিরোধী আন্দোলন এবং নারীর স্বাধীনতা নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবাদ ও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে, ধর্মীয় সরকারী শাসন ব্যবস্থার আওতায় এইসব প্রতিবাদ প্রায়ই দমন করা হয়।

পরাস্তু আহমাদি ও তার দলকে আইনি ব্যবস্থার সম্মুখীন হতে হলে, এটি ইরানে মহিলাদের স্বাধীনতার জন্য এক নতুন সংগ্রামের সূচনা হতে পারে, যেটি হয়তো বিশ্বব্যাপী আরো আলোচনার সৃষ্টি করবে।