নয়াদিল্লি: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৫০ শতাংশ তামার শুল্ক নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO)-র কাছে আলোচনার আবেদন জানিয়েছে ভারত। মঙ্গলবার দিল্লি থেকে জানানো হয়, আমেরিকার এই পদক্ষেপকে নিরাপত্তা স্বার্থের কারণ দেখানো হলেও মূলত এটি একটি “সেফগার্ড মেজার” বা রক্ষাকবচমূলক শুল্ক ব্যবস্থা বলে মনে করছে ভারত।
গত ৩০ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র তামার কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত নেয়, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে। এই শুল্ক আরোপের কোনও নির্দিষ্ট মেয়াদ নেই বলে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ভারত WTO-কে জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্তের আগে WTO কমিটি অন সেফগার্ডস-কে কোনও আনুষ্ঠানিক তথ্য দেয়নি আমেরিকা। ফলে প্রভাবিত দেশ হিসেবে ভারত আনুষ্ঠানিক আলোচনার অনুরোধ করছে।
ভারতের WTO-তে পাঠানো যোগাযোগ বার্তায় বলা হয়েছে, “ভারত এই বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে দ্রুত প্রতিক্রিয়া আশা করছে এবং আলোচনার জন্য পারস্পরিকভাবে সুবিধাজনক সময় ও স্থান নির্ধারণ করতে চায়।”
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত তামার আমদানিকারক দেশ হলেও যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তামা পণ্য রপ্তানি করেছে। অন্যদিকে, আমেরিকা থেকে ভারত প্রায় ২৮৮ মিলিয়ন ডলারের তামার স্ক্র্যাপ আমদানি করেছে। নতুন শুল্ক নীতির ফলে এই বাণিজ্যে বড় প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতের তামার প্রধান সরবরাহকারী দেশগুলির মধ্যে রয়েছে চিলি, ইন্দোনেশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া।
গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (GTRI)-এর জুলাই মাসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, তামার উপর আমেরিকার ৫০ শতাংশ শুল্ক স্পষ্টভাবে সুরক্ষাবাদী নীতি, যেখানে ভারত তামার আকরিকের উপর মাত্র ২.৫ শতাংশ এবং প্রক্রিয়াজাত তামা পণ্যের উপর সর্বাধিক ১০ শতাংশ শুল্ক নেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতির পেছনে মূল লক্ষ্য স্থানীয় প্রতিরক্ষা, পরিষ্কার শক্তি এবং অবকাঠামো খাতে বিদেশি নির্ভরতা কমানো।
উল্লেখ্য, তামা বৈদ্যুতিক যানবাহন (EV), বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা, সেমিকন্ডাক্টর ও প্রতিরক্ষা ইলেকট্রনিক্সের অন্যতম প্রধান কাঁচামাল।
স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম এবং গাড়ির যন্ত্রাংশের উপর আরোপিত আমেরিকার শুল্ককে ভারত WTO-তে সেফগার্ড মেজার হিসেবে উল্লেখ করলেও আমেরিকা সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারত জানিয়ে দিয়েছে, আমেরিকার বিরুদ্ধে পাল্টা শুল্ক আরোপের অধিকার সংরক্ষণ করবে।
বর্তমানে ভারত-আমেরিকা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি (BTA) নিয়ে আলোচনা করছে। মার্চ ২০২৫ থেকে শুরু হওয়া আলোচনার পাঁচ দফা বৈঠক ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। তবে আগস্ট মাসে ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর ষষ্ঠ দফার আলোচনার তারিখ স্থগিত হয়ে গেছে। ভারত আশা করছে শীঘ্রই আলোচনা পুনরায় শুরু করা যাবে। তবে এই শুল্ক সমস্যার সমাধান না হলে চুক্তি সম্পাদন কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ভারতের কৃষি ও দুগ্ধ খাতে আরও বাজার প্রবেশাধিকার দাবি করছে, যা ভারত মেনে নিতে নারাজ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কৃষক ও জেলেদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার কোনও আপস করবে না।
বর্তমানে ভারত ও আমেরিকা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ বিলিয়ন ডলার করার লক্ষ্যে কাজ করছে। এপ্রিল-জুলাই সময়ে ভারতের আমেরিকায় রপ্তানি ২১.৬৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৩৩.৫৩ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্র এখনও ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার।