নয়াদিল্লি: রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনার ইস্যুতে ফের ভারতকে নিশানা করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দিলেন প্রকাশ্যে। তবে তার জবাবে সোজাসাপটা ভাষায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানাল ভারত। জানিয়ে দিল, দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ ও জ্বালানি নিরাপত্তা সুরক্ষায় যা করণীয়, তা করা হবে, বাইরের চাপের তোয়াক্কা না করেই (india russia oil imports)।
সোমবার এক বিবৃতিতে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক জানায়, রাশিয়া থেকে তেল আমদানি “রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়”, বরং “আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতির চাপে নেওয়া বাধ্যতামূলক পদক্ষেপ”। ভারতের কথায়, “এটা দেশের জ্বালানি চাহিদা ও নাগরিকদের জন্য স্থিতিশীল এবং সাশ্রয়ী জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার চেষ্টা।”
আমেরিকা-ইউরোপকেও তুলোধোনা দিল ভারত
কিন্তু শুধু নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেই থেমে থাকেনি দিল্লি। তীব্র ভাষায় মার্কিন ও ইউরোপীয় দ্বিচারিতার কথাও তুলে ধরেছে তারা। বিদেশ মন্ত্রক বলেছে, ইউক্রেন যুদ্ধের বিরুদ্ধে মুখে যতই সোচ্চার হোক, আমেরিকা ও ইউরোপ নিজেরা কিন্তু এখনও রাশিয়ার সঙ্গে বিপুল বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে, তা সে জ্বালানি হোক বা গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাশিয়ার সঙ্গে ২০২৪ সালে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৬৭.৫ বিলিয়ন ইউরো পণ্যে ও ১৭.২ বিলিয়ন ইউরো পরিষেবা খাতে, যা ভারতের তুলনায় অনেক বেশি। শুধু জ্বালানি নয়, রাশিয়া থেকে ইউরোপ এখনও আমদানি করছে সার, রাসায়নিক, লোহা-ইস্পাত ও যন্ত্রপাতি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও চিত্র একই। তারা রাশিয়া থেকে এখনও ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লুরাইড আমদানি করছে পরমাণু শিল্পের জন্য, নিচ্ছে প্যালাডিয়াম ইভি (EV) গাড়ি খাতে, এবং আরও বহু গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল।
এই অবস্থায় ভারত প্রশ্ন তুলেছে, যখন আমেরিকা ও ইউরোপ নিজেরা রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে, তখন শুধু ভারতকে নিশানা করাটা কি ন্যায়সংগত?
“রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসার খেসারত দেবে ভারত”, হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের
বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতির কয়েক ঘণ্টা আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেন, “ভারত বিপুল পরিমাণে রুশ তেল কিনছে এবং তা বাজারে বিক্রি করে মুনাফা করছে।” তাঁর হুঁশিয়ারি, “এই সম্পর্কের খেসারত ভারতকে দিতেই হবে।”
ট্রাম্প বলেন, “আমেরিকায় ভারতীয় পণ্যের উপর আমি বড়সড় হারে শুল্ক বাড়াতে চলেছি।” যদিও নির্দিষ্ট করে তিনি কোনও পরিমাণ জানাননি। এর আগেও তিনি ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিলেন এবং রুশ তেল ও অস্ত্র কেনা নিয়ে ‘অজানা অঙ্কে’ জরিমানার হুমকি দিয়েছিলেন।
রাশিয়ার কটাক্ষ: “প্রভাব হারানোর ভয়েই আমেরিকার শুল্ক যুদ্ধ”
ওয়াশিংটনের এই হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়াও মুখ খুলেছে। রুশ বিদেশ মন্ত্রক এক বিবৃতিতে বলেছে, “যুক্তরাষ্ট্র বুঝে গিয়েছে যে তাদের বিশ্ব আধিপত্য ভাঙছে। তাই এখন অন্য দেশকে শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে।”
মস্কোর কটাক্ষ, “একটা নতুন বহু-মেরুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা তৈরি হচ্ছে। ইতিহাসের এই গতি শুল্ক যুদ্ধ দিয়ে আটকানো যাবে না।”