ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় (এমইএ) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যের (Tariff Threat)তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, যেখানে তিনি রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানির কারণে ভারতীয় পণ্যের উপর উল্লেখযোগ্য শুল্ক বৃদ্ধির হুমকি দিয়েছেন। এমইএর মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল ৪ আগস্ট এক বিবৃতিতে বলেন, “ভারতকে লক্ষ্য করে এই পদক্ষেপ অযৌক্তিক এবং অগ্রহণযোগ্য।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন যে ভারত তার জাতীয় স্বার্থ এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এই ঘটনা ভারত-মার্কিন সম্পর্কের উপর নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, যা গত কয়েক বছরে কৌশলগত অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে শক্তিশালী হয়েছে।
ট্রাম্পের মন্তব্য ও ভারতের প্রতিক্রিয়া
ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে বলেন, “ভারত কেবল রাশিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণে তেল ক্রয় করছে না, তারা এই তেলের একটি বড় অংশ বাজারে বিক্রি করে বিপুল মুনাফা অর্জন করছে। ইউক্রেনে রুশ যুদ্ধযন্ত্রের দ্বারা কত মানুষ নিহত হচ্ছে, তা নিয়ে তাদের কোনো চিন্তা নেই।
এই কারণে আমি ভারতের উপর মার্কিন শুল্ক উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াব।” ট্রাম্প আরও দাবি করেন যে ভারতের শুল্ক হার বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং ভারতের অ-আর্থিক বাণিজ্য বাধাগুলো “অত্যন্ত কঠোর এবং আপত্তিকর”। তিনি গত ৩১ জুলাই একটি নির্বাহী আদেশে ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫% শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেন, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে।
এই মন্তব্যের জবাবে এমইএর মুখপাত্র জয়সওয়াল বলেন, “ইউক্রেন সংঘাত শুরু হওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভারতকে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির জন্য লক্ষ্যবস্তু করেছে। বাস্তবে, ইউক্রেন সংঘাতের পর ঐতিহ্যবাহী তেল সরবরাহ ইউরোপের দিকে ডাইভার্ট করা হয়েছিল, যার ফলে ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি শুরু করে।
তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী শক্তি বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ভারতের এই আমদানিকে উৎসাহিত করেছিল।” তিনি আরও জানান, ভারতের তেল আমদানি ভারতীয় গ্রাহকদের জন্য নির্ভরযোগ্য এবং সাশ্রয়ী শক্তির ব্যয় নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে করা হয়।
ভারতের অবস্থান ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট
মার্কিন শক্তি তথ্য প্রশাসনের (ইআইএ) তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে ইউক্রেন সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ভারত রাশিয়া থেকে ছাড়যুক্ত মূল্যে তেল ক্রয় করছে, যা রাশিয়ার উপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার ফলাফল। এই সময়ে ভারতের রাশিয়ান তেল আমদানি ছয় গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভারতের এই পদক্ষেপ বৈশ্বিক বাজারে শক্তির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ শক্তির চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তবে, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য এই আমদানিকে লক্ষ্য করে শুল্ক বৃদ্ধির হুমকি দিয়েছে, যা ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
২০২৪-২৫ সালে ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যেখানে ভারত ৮৬.৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে এবং ৪৫.৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। সেবা খাতে ভারত ২৮.৭ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি এবং ২৫.৫ বিলিয়ন ডলার আমদানি করেছে, যার ফলে ৩.২ বিলিয়ন ডলারের উদ্বৃত্ত রয়েছে। এই শক্তিশালী বাণিজ্য সম্পর্ক সত্ত্বেও, ট্রাম্প প্রশাসন কৃষি, দুগ্ধজাত পণ্য এবং জিনগতভাবে পরিবর্তিত খাদ্যপণ্যে শুল্ক ছাড়ের জন্য চাপ দিচ্ছে, যা ভারতের কৃষকদের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
রাজনৈতিক ও কৌশলগত প্রভাব
ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধির হুমকি ওয়াশিংটনের একটি চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির আলোচনার অংশ। ভারত ইতিমধ্যে পাঁচ দফা আলোচনা সম্পন্ন করেছে, এবং আগামী ২৫-২৯ আগস্ট নয়াদিল্লিতে মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পরবর্তী দফার আলোচনা নির্ধারিত হয়েছে। এমইএ জানিয়েছে, ভারত-মার্কিন সম্পর্ক শক্তিশালী এবং পারস্পরিক স্বার্থ, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং জনগণের মধ্যে দৃঢ় সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
ট্রাম্পের মন্তব্যে ভারতের অর্থনীতিকে “মৃত” বলে উল্লেখ করার জবাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, “ভারত বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল প্রধান অর্থনীতি এবং শীঘ্রই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হতে চলেছে।” তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যে ভারত তার অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় সতর্ক থাকবে।
ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধির হুমকি এবং ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তীব্র প্রতিক্রিয়া ভারত-মার্কিন সম্পর্কের একটি সংবেদনশীল মুহূর্তকে তুলে ধরেছে। ভারতের রাশিয়ান তেল আমদানি দেশের শক্তি নিরাপত্তা এবং গ্রাহকদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্য নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য।
আইএসএল এবার কোন পথে? আটটি ক্লাবের সঙ্গে বৈঠকে বসছে এআইএফএফ
এমইএর বিবৃতি ভারতের অবস্থানকে স্পষ্ট করে যে, এটি জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় কোনো আপস করবে না। আগামী দিনে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এই উত্তেজনা কমাতে এবং পারস্পরিক সুবিধাজনক বাণিজ্য চুক্তি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।