ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক ভাঙনের মুখে? নিকি হ্যালির কড়া সতর্কতা

ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক এক নতুন ধরণের অস্থিরতার মুখে পড়েছে। মার্কিন রিপাবলিকান নেতা এবং সাবেক জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি (Nikki Haley) ভারতের প্রতি কড়া বার্তা দিয়ে…

India Must Take It Seriously': Nikki Haley Warns New Delhi Over Russian Oil Trade

ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক এক নতুন ধরণের অস্থিরতার মুখে পড়েছে। মার্কিন রিপাবলিকান নেতা এবং সাবেক জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি (Nikki Haley) ভারতের প্রতি কড়া বার্তা দিয়ে বলেছেন, রাশিয়ান তেল আমদানির বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্বেগকে ভারতকে “গুরুত্বসহকারে” নিতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব হোয়াইট হাউসের সঙ্গে সমাধানে পৌঁছাতে হবে।

রবিবার এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ দেওয়া পোস্টে হ্যালি লিখেছেন, “ভারতকে অবশ্যই ট্রাম্পের বক্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে এবং হোয়াইট হাউসের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব সমাধান মেলে, তত ভালো।”
তিনি আরও বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম দুই গণতন্ত্রের মধ্যে যে কয়েক দশকের আস্থা ও সৌহার্দ্য রয়েছে, সেটিই বর্তমান অস্থির পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ভিত্তি হতে পারে।

   

হ্যালি জোর দিয়ে বলেন, দ্বিপাক্ষিক টানাপোড়েন সত্ত্বেও ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের উচিত বৃহত্তর কৌশলগত লক্ষ্যগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া। বিশেষ করে চীনের উত্থান ঠেকাতে উভয় দেশের মধ্যে সমন্বয় অপরিহার্য।

তিনি উল্লেখ করেন, “আমাদের দৃষ্টি হারানো উচিত নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল আমাদের যৌথ লক্ষ্য—চীনকে মোকাবিলা করা। সেই জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পাশে ভারতের মতো একজন বন্ধু থাকা দরকার।”

এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি ইঙ্গিত দেন যে রাশিয়ান তেল কিংবা বাণিজ্যিক টানাপোড়েনের মতো ইস্যুগুলি গুরুত্বপূর্ণ হলেও, চীনের মতো কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত মিত্রতার ভাঙন একেবারেই কাম্য নয়।

সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের রাশিয়ান তেল কেনার কারণে একাধিক সেকেন্ডারি ট্যারিফ বা পরোক্ষ শুল্ক আরোপ করেছে। এর ফলে ভারতের বিভিন্ন রপ্তানিপণ্যে শুল্কহার ৫০ শতাংশেরও বেশি ছাড়িয়েছে। ব্রাজিল ছাড়া এত উচ্চ হারে ট্রাম্প অন্য কোনো দেশের পণ্যে শুল্ক আরোপ করেননি।
ভারতের পক্ষে এই সিদ্ধান্তকে “অন্যায়, অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য” বলে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছে নয়া দিল্লি। বিশেষত টেক্সটাইল ও সামুদ্রিক পণ্য রপ্তানি খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

Advertisements

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই শুল্কবৃদ্ধির জবাবে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, ভারতের কৃষক ও জেলেদের স্বার্থের প্রশ্নে দেশ কোনোদিনই আপস করবে না।

তিনি বলেন, “আমি জানি এ কারণে আমাকে রাজনৈতিক মূল্য দিতে হবে। কিন্তু আমি আমার কৃষক ও জেলেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সেই মূল্য দিতেও প্রস্তুত।” মোদির এই বার্তা স্পষ্ট করে দেয় যে, ট্রাম্প প্রশাসনের চাপ সত্ত্বেও ভারত নিজের অভ্যন্তরীণ স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে।
নিকি হ্যালি এর আগেও এক নিউজউইকের নিবন্ধে সতর্ক করেছিলেন যে, ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক “ভাঙনের কিনারায়” দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাঁর মতে, যদি যুক্তরাষ্ট্র সত্যিই চীনের বৈশ্বিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে চায়, তবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠন অপরিহার্য।

তিনি আরও বলেন, ভারতকে কখনোই চীনের মতো প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখা উচিত নয়। বরং শুল্ক, রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বা ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আমেরিকার ভূমিকা—এসব প্রশ্নে বিতর্ক থাকলেও, সেগুলি দ্বিপাক্ষিক কূটনীতির মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমানে ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক এক জটিল সমীকরণে দাঁড়িয়ে আছে। একদিকে, ভারত সাশ্রয়ী মূল্যে রাশিয়া থেকে তেল কিনে নিজেদের জ্বালানি চাহিদা পূরণ করতে চাইছে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে চাইছে এবং ভারতের অবস্থানকে চাপের মুখে ফেলছে।
একইসঙ্গে, উভয় দেশই চীনের বিরুদ্ধে কৌশলগত জোট গড়ে তুলতে আগ্রহী। এই বহুমুখী চাপের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা নয়া দিল্লির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

নিকি হ্যালির সতর্কবার্তা ভারত-আমেরিকা সম্পর্কের বর্তমান বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে দেয়। একদিকে দুই দেশের মধ্যে কয়েক দশকের আস্থা ও সহযোগিতা রয়েছে, অন্যদিকে রাশিয়ান তেল আমদানি ও শুল্ক সংক্রান্ত টানাপোড়েন সম্পর্ককে কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলেছে।
তবুও উভয় দেশের কৌশলগত প্রয়োজনীয়তা—বিশেষ করে চীনকে মোকাবিলা করার লক্ষ্যে—এই সম্পর্কের ভিত্তিকে অটুট রাখবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। এখন দেখার বিষয়, হোয়াইট হাউস ও নয়া দিল্লি কত দ্রুত সমঝোতার পথ খুঁজে বের করতে পারে।