ভারত-ইন্দোনেশিয়া সম্পর্কের নতুন দিগন্ত

ভারত এবং ইন্দোনেশিয়ার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রবোয়ো সুবিয়ান্তোর ভারত সফরের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর এবং শক্তিশালী হবে বলে আশা করা…

ভারত-ইন্দোনেশিয়া সম্পর্কের নতুন দিগন্ত

ভারত এবং ইন্দোনেশিয়ার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রবোয়ো সুবিয়ান্তোর ভারত সফরের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর এবং শক্তিশালী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতের ৭৬ তম প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি হিসেবে সুবিয়ান্তো তিন দিনের সফরে ভারতে এসেছেন। এবং তার এই সফর ভারত-ইন্দোনেশিয়া কৌশলগত অংশীদারিত্বের নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার সম্পর্ক ইতিহাসের নানা গুরুত্বপূর্ণ পর্ব পার করেছে। প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং ইন্দোনেশিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট সুকার্নোর মধ্যে নিবিড় সম্পর্কের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল। দুই নেতা ১৯৫৫ সালের বান্দুং সম্মেলনে নন-অ্যালাইনড মুভমেন্ট (নাম) প্রতিষ্ঠা করেন, যা বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল।

এছাড়া সুকার্নো ১৯৫০ সালে ভারতের প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। তবে দুই দেশের সম্পর্কের ইতিহাসে কিছু খারাপ সময়ও ছিল যেমন ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ইন্দোনেশিয়া পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন এবং জাকার্তায় ভারতীয় দূতাবাসে হামলা।

তবে ভারত এবং ইন্দোনেশিয়া তাদের সম্পর্ককে আরও গভীর করেছে। ১৯৫১ সালে বন্ধুত্বপূর্ণ চুক্তির মাধ্যমে। বর্তমানে ইন্দোনেশিয়া ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় ২৬.৬৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ২০১৮ সালে ভারত ও ইন্দোনেশিয়া তাদের সম্পর্ককে “নতুন সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্ব” হিসেবে উন্নীত করেছে এবং ‘ইন্দো-প্যাসিফিক’ অঞ্চলে সামুদ্রিক সহযোগিতার বিষয়ে একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে।

চিনের সামরিক কর্মকাণ্ডের ফলে ভারত ইন্দোনেশিয়াকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার হিসেবে দেখতে শুরু করেছে। বিশেষত ভারত ও রাশিয়া যৌথভাবে বিকশিত ব্রহ্মস হাইপারসনিক মিসাইলগুলি ভারতীয় সমর্থক দেশগুলির কাছে সরবরাহ করছে। এখন ইন্দোনেশিয়া এই মিসাইলগুলি কেনার দিকে নজর দিচ্ছে। যা দক্ষিণ চীন সাগরে চিনের আগ্রাসন প্রতিহত করতে সহায়তা করবে।

Advertisements

সুবিয়ান্তোর ভারত সফর কেবল প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। দুদেশ একযোগে সাবাং পোর্ট উন্নয়নের বিষয়েও আলোচনা করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২০১৮ সাল থেকে সাবাং পোর্ট উন্নয়নের পরিকল্পনা চলছে। তবে এখন এই প্রকল্প দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানা যাচ্ছে। মালাক্কা প্রণালীতে অবস্থিত এই পোর্ট ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সুবিধা হতে পারে। যা ভারতকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে তার বাণিজ্যিক রুট সুরক্ষিত করতে সাহায্য করবে।

বাণিজ্য, নিরাপত্তা, এবং ডিজিটাল গভর্নেন্সের ক্ষেত্রে ভারত ও ইন্দোনেশিয়া আরও গভীর সহযোগিতার পথে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। দুই দেশই পরিবেশগত সংকটের সম্মুখীন এবং একসাথে পরিবেশগত ঝুঁকি মোকাবিলায় কাজ করার জন্য প্রস্তুত। খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও ইন্দোনেশিয়া চলতি বছরে ১ মিলিয়ন মেট্রিক টন চাল ভারতের কাছ থেকে আমদানি করার পরিকল্পনা করছে।

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুবিয়ান্তোর এই সফর বিশেষ করে মায়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা, দুই দেশের সম্পর্কের কৌশলগত গভীরতাকে আরও শক্তিশালী করবে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারত ও ইন্দোনেশিয়া মায়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একযোগে কাজ করছে। যার ফলে দুই দেশের কৌশলগত সম্পর্কের নতুন দিগন্ত খুলে দেওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।