সন্ত্রাসে ডুবে, ধার করে চলে, রাষ্ট্রপুঞ্জে পাকিস্তানকে ধুয়ে দিল ভারত

নয়াদিল্লি: আন্তর্জাতিক কূটনীতির উচ্চস্তরে ফের একবার দৃপ্ত কণ্ঠে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল ভারত (india blasts pakistan at un)। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় পাকিস্তানের প্রতি…

india blasts pakistan at un

নয়াদিল্লি: আন্তর্জাতিক কূটনীতির উচ্চস্তরে ফের একবার দৃপ্ত কণ্ঠে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল ভারত (india blasts pakistan at un)। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় পাকিস্তানের প্রতি একগুচ্ছ অভিযোগ উত্থাপন করলেন ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি পার্বথানেনি হরিশ। শান্তি ও বহুপাক্ষিকতার ভূমিকাবিষয়ক আলোচনায় অংশ নিতে গিয়ে তিনি পাকিস্তানকে সরাসরি আখ্যা দেন ‘চরমপন্থায় নিমজ্জিত সন্ত্রাসবাদ-ঘেঁষা রাষ্ট্র’ এবং ‘IMF-এর ধারাবাহিক ঋণগ্রহীতা’ হিসেবে।

হরিশ বলেন, “ভারতীয় উপমহাদেশে দুটি রাষ্ট্রের পথচলা আজ পরস্পরের বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে। একদিকে ভারত, একটি পরিণত গণতন্ত্র, আর্থিকভাবে স্বনির্ভর, বহুত্ববাদী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ; অন্যদিকে পাকিস্তান, যেখানে চরমপন্থা ও সন্ত্রাসের মদতপ্রাপ্ত রাজনীতি দেউলিয়া অর্থনীতিকে টেনে নিচ্ছে আরও গভীরে।” পাকিস্তানের প্রতিনিধি যখন রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চে ভারতের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন, ঠিক তখনই হরিশের পাল্টা বক্তব্য রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের অবস্থানকে এক নতুন দৃঢ়তায় তুলে ধরে।

   

পহেলগাঁও হামলা ও ‘অপারেশন সিঁদুর’: ভারতের জবাবদিহির বার্তা

রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে উঠে আসে ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁও-এ ২৬ জন নিরীহ নাগরিকের ওপর সংঘটিত রক্তক্ষয়ী জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গও। তিনি স্পষ্ট বলেন, “যেসব রাষ্ট্র সীমানা পেরিয়ে সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেয়, তাদের উচিত আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌলিক নীতিগুলিকে পদদলিত করার মূল্য চোকানো।” ওই হামলার প্রত্যক্ষ জবাবে ভারত ৭ মে চালায় ‘অপারেশন সিঁদুর’, যার লক্ষ্য ছিল পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে (PoJK) অবস্থিত সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি।

হরিশ ব্যাখ্যা করেন, “অভিযান ছিল মেপে নেওয়া, লক্ষ্যনির্ভর ও সীমিত পরিসরে। মূল উদ্দেশ্য সফল হওয়ার পরই পাকিস্তানের অনুরোধে ভারত একতরফা সামরিক অভিযান থামিয়ে দেয়।” উল্লেখযোগ্যভাবে, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘মধ্যস্থতা’র দাবি করেছিলেন, যদিও ভারতের বার্তা ছিল পরিস্কার, এই অভিযানের নীতিগত ভিত্তি ছিল আত্মরক্ষা, কৌশলগত সংযম ও আন্তর্জাতিক দায়িত্ববোধ।

Advertisements

রাষ্ট্রসংঘে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান

হরিশ আরও বলেন, “আধুনিক যুগে সংঘাতের প্রকৃতি বদলে গিয়েছে। আজ, অ-রাষ্ট্রীয় গোষ্ঠী, যারা রাষ্ট্রীয় মদতে চলছে, তাদের মাধ্যমেই ছড়াচ্ছে অস্ত্র পাচার, র‌্যাডিক্যালাইজেশন ও সন্ত্রাস। ডিজিটাল প্রযুক্তি এই চক্রকে আরও জোরদার করেছে।” তাঁর কথায়, একবিংশ শতাব্দীতে শান্তির স্থায়ী ভিত্তি গড়তে হলে প্রথমেই সন্ত্রাসবাদকে রাষ্ট্রীয় নীতির অংশ হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

রাষ্ট্রসংঘ সংস্কারের প্রশ্নে স্পষ্ট ভারতের বার্তা

রাষ্ট্রদূত হরিশ জাতিসংঘের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। বলেন, “আজ বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা গভীর চ্যালেঞ্জের মুখে। নিরাপত্তা পরিষদের গঠন ও প্রতিনিধিত্ব নিয়েই যখন নানা প্রশ্ন উঠছে, তখন সময় এসেছে আত্মবিশ্লেষণের।” এই প্রসঙ্গে ভারতের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ভারত শুধু বৃহত্তম শান্তিরক্ষী বাহিনীই পাঠায়নি, নারী শান্তিরক্ষায়ও পথপ্রদর্শক। বহুদিন ধরেই ভারত বৈশ্বিক শান্তি ও সুবিচার প্রতিষ্ঠায় সক্রিয়ভাবে কাজ করে চলেছে।”

বক্তব্যের শেষদিকে তিনি বলেন, “সংঘাত সমাধানে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলির সার্বভৌম সম্মতি ও জাতীয় মালিকানা অপরিহার্য। ভারত বহুপাক্ষিকতা ও শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাসী। আমরা শান্তির জন্য কাজ করি, শব্দে নয়, কৌশলে।”