জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত G20 সামিটের পার্শ্ব অনুষ্ঠানে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা এক সঙ্গে নতুন ত্রিপাক্ষিক প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন অংশীদারি ঘোষণা করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবনিস এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির নিয়ে গঠিত এই উদ্যোগের নাম রাখা হয়েছে Australia-Canada-India Technology and Innovation (ACITI) Partnership।
প্রতিটি দেশের প্রাকৃতিক ও প্রযুক্তিগত শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এই অংশীদারির লক্ষ্য থাকবে — গ্রিন এনার্জি উদ্ভাবন, ক্রিটিক্যাল মাইনারালস ও শক্তিশালী, টেকসই সাপ্লাই চেইন তৈরি, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো। অংশীদাররা উল্লেখ করে যে, এটা বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগগুলোর পরিপূরক হবে এবং নেট জিরো লক্ষ্যের দিকে তাদের কৌশলগত সহযোগিতাকে ত্বরান্বিত করবে।
কীরকম অগ্রাধিকার থাকবে?
ACITI-র ঘোষণার মূল কিছু অঙ্গ হলো —
-
গ্রিন এনার্জি গবেষণা ও ব্যবহারে যৌথ উদ্যোগ: পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, শক্তি সঞ্চয় ও গ্রিড-রেজিলিয়েন্সে সহযোগিতা।
-
ক্রিটিক্যাল মাইনারেলস ও সাপ্লাই চেইন ডাইভার্সিফিকেশন: ইলেকট্রিক যান, ব্যাটারি ও গ্রিন টেকনোলজির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল নিরাপদ ও টেকসই উৎস থেকে আনতে কাজ।
-
AI-এর দিকনির্দেশনা ও গ্রহণযোগ্যতা: নাগরিক জীবনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নিরাপদ, ন্যায্য ও অগ্রগামী ব্যবহার নিশ্চিত করা।
-
অভিনবতা ও স্টার্টআপ ক্লাস্টারসমূহে বিনিয়োগ: ত্রিপাক্ষিক বিনিময়, বিনিয়োগ ও গবেষণা-উন্নয়নে সহায়তা করা।
প্রত্যেক দেশের কৌশলগত স্বার্থ এবং প্রাকৃতিক সম্পদকে মিলিয়ে এই অংশীদারি তিন মহাদেশ ও তিনটি মহাসাগরের ওপর বিস্তৃত সহযোগিতা গড়ে তুলবে—এটি শুধু প্রযুক্তিগত বিনিময় নয়, ভূ-রাজনীতি ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার দিক থেকেও গুরুত্ব বহন করে।
কবে থেকে এগোবে প্রকল্প?
ঘোষণায় বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ২০২৬-এর প্রথম কোয়ারটারে একত্রে বসে কার্যকর কৌশল এবং বাস্তবায়ন পথ নির্ধারণ করবেন। ফলে পরবর্তী কয়েক মাসে কার্যকর ও প্রযুক্তিগত কাজের রূপরেখা স্পষ্ট হতে শুরু করবে।
কেন এই অংশীদারি গুরুত্বপূর্ণ?
বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই চেইনের পুনর্গঠন এবং প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে ডাইভার্সিফিকেশন নীতিই বহু দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার মূলধন হয়ে উঠেছে। তত্পরত্বশীল AI ও ক্লিন-এনার্জি সেক্টরে নির্ভরযোগ্য উপকরণ ও দক্ষতা সরবরাহ নিশ্চিত করতে মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারিত্ব অত্যন্ত প্রয়োজন। তাছাড়া, এই ধরনের জোট গণতান্ত্রিক পছন্দসই অংশীদারদের মধ্যে নীতিগত ও নৈতিক দিক থেকে একরকম অভিসন্ধি তৈরি করতে পারে—যা টেকসই প্রযুক্তি নীতিতে গুরুত্ব বহন করে।
A new trilateral technology and innovation partnership!
Had an excellent meeting with Mr. Anthony Albanese, PM of Australia and Mr. Mark Carney, PM of Canada on the sidelines of the G20 Summit in Johannesburg. We are delighted to announce an Australia-Canada-India Technology and… pic.twitter.com/Qa5lSvlIb2
— Narendra Modi (@narendramodi) November 22, 2025
সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ ও প্রশ্ন
যদিও ঘোষণাটি ইতিবাচক, তবু কিছু চ্যালেঞ্জও থাকবে—
-
ক্রিটিক্যাল মাইনারেলসের সাপ্লাই চেইন দ্রুত ডাইভার্সিফাই করা সহজ নয়; বিদ্যমান গ্লোবাল ইকোনমিক শর্ত এবং বিনিয়োগ চাহিদা এটিকে জটিল করে।
-
AI-র দায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত করতে নীতিগত সমন্বয় জরুরি; এটি কেবল প্রযুক্তি স্তরের কাজ নয়, আইনগত ও নৈতিক কাঠামোও তৈরি করতে হবে।
-
অংশীদার দেশের অভ্যন্তরীণ নীতি, রপ্তানি-নিয়ম এবং রিসোর্স শেয়ারিং-এ অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সমঝোতা প্রয়োজন হবে।
ACITI অংশীদারি একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ—বিশ্বমানচিত্রে প্রযুক্তি, জলবায়ু ও সাপ্লাই চেইন সংক্রান্ত নতুন বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করার সুযোগ করে দিচ্ছে। ভারতের মতো বড় এবং দ্রুত বাড়তে থাকা প্রযুক্তি বাজারের জন্য এটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার নতুন পথ খুলে দেবে। আগামী কয়েক মাসে কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন কিভাবে নির্ধারিত হবে—তার ওপরই নির্ভর করবে এই অংশীদারির বাস্তব ফলাফল ও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব।
