Tuesday, October 14, 2025
HomeWorldপ্রাক্তন পাক-প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ১১ জুন জেল থেকে মুক্তির সম্ভাবনা

প্রাক্তন পাক-প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ১১ জুন জেল থেকে মুক্তির সম্ভাবনা

ইসলামাবাদ, ৮ জুন ২০২৫: পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান (Imran Khan) বর্তমানে আদিয়ালা জেলে বন্দি৷ আগামী ১১ জুন (বুধবার) উচ্চ-প্রোফাইল আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় ইমরান খান জামিন পেতে পারেন বলে জানিয়েছেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পার্টির চেয়ারম্যান গোহর আলি খান। ইসলামাবাদ হাইকোর্ট (আইএইচসি) এই মামলায় ইমরান খান এবং তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবির সাজা স্থগিত করার আবেদনের শুনানির জন্য নির্ধারিত রয়েছে। এই মামলাটি ১৯০ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি বিতর্কিত বন্দোবস্তকে কেন্দ্র করে, যা যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) এবং পাকিস্তানের সম্পত্তি ম্যাগনেট মালিক রিয়াজের সঙ্গে সম্পর্কিত।

Advertisements

৭২ বছর বয়সী ইমরান খান ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে আদিয়ালা জেলে একাধিক মামলায় বন্দি রয়েছেন। আল-কাদির ট্রাস্ট মামলার অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে যুক্তরাজ্যের এনসিএ কর্তৃক পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো ১৯০ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি তহবিল, যা মালিক রিয়াজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্তের অংশ হিসেবে ফেরত দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে যে, ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পিটিআই সরকার এই তহবিল, যা জাতীয় কোষাগারের জন্য উদ্দিষ্ট ছিল, তা মালিক রিয়াজের কোম্পানি বাহরিয়া টাউনের দায় পরিশোধের জন্য ব্যবহার করার অনুমতি দেয়। এই বন্দোবস্তের বিনিময়ে, আল-কাদির ট্রাস্ট, যার একমাত্র ট্রাস্টি ইমরান খান এবং বুশরা বিবি, বাহরিয়া টাউন থেকে জেলামের সোহাওয়া তেহসিলে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য ৪৫৮ কানাল জমি পেয়েছিল।

Advertisements

গোহর আলি খান দাবি করেছেন যে, বুশরা বিবিকে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ছাড়াই জেলে রাখা হয়েছে, যা ইমরান খানের উপর চাপ সৃষ্টির একটি কৌশল। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, খানের মুক্তির জন্য কোনো সমঝোতা করা হবে না। গোহর ১১ জুনকে ইমরান খান এবং বুশরা বিবির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, যদিও তিনি এর পেছনে নির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করেননি। এর আগে, ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো (এনএবি) তাদের যুক্তি তৈরির জন্য অতিরিক্ত সময় চাওয়ায় আইএইচসি শুনানি স্থগিত করেছিল। গোহর আশা প্রকাশ করেছেন যে, আগামী শুনানিতে ইমরান খান এবং তাঁর স্ত্রী জামিন পাবেন।

পিটিআইয়ের প্রতিবাদী আন্দোলন
ইমরান খানের জেল থেকে মুক্তির দাবিতে পিটিআই পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)-নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদী আন্দোলন শুরু করার পরিকল্পনা করছে। গোহর জানিয়েছেন, এই আন্দোলন জেল থেকে ইমরান খানের নেতৃত্বে পরিচালিত হবে। পিটিআই ৯ জুন একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আসন্ন ফেডারেল বাজেটের বিষয়ে তাদের কৌশল ঘোষণা করবে। খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী এবং পিটিআইয়ের একজন বিশিষ্ট নেতা আলি আমিন গান্দাপুর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, ইমরান খান মুক্তি না পেলে ঈদুল আজহার পরে তারা একটি ব্যাপক আন্দোলন শুরু করবেন।

ইমরান খান বারবার দাবি করেছেন যে, গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে, যাকে তিনি “মাদার অফ অল রিগিং” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি তাঁর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী পিএমএল-এন এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)-কে “ম্যান্ডেট চোর” বলে সমালোচনা করেছেন। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক বিষয়ক বিশেষ সহকারী রানা সানাউল্লাহ পিটিআইকে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে আলোচনায় বসার এবং নির্বাচনী আইন সংস্কারে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “পিটিআইয়ের উচিত সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসে নির্বাচনী সংস্কারে অবদান রাখা।”

আল-কাদির ট্রাস্ট মামলার বিবরণ
আল-কাদির ট্রাস্ট মামলাটি ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের এনসিএ-র সঙ্গে মালিক রিয়াজের পরিবারের ১৯০ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি বন্দোবস্তের সঙ্গে সম্পর্কিত। এনসিএ জানিয়েছিল, তারা আটটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড জব্দ করেছে, যা “বিদেশী দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে অর্জিত” বলে সন্দেহ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে যে, ইমরান খান তাঁর দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা শেহজাদ আকবরকে এই বিষয়টি সমাধানের নির্দেশ দিয়েছিলেন, যিনি পরবর্তীতে জাতীয় কোষাগারের এই তহবিল বাহরিয়া টাউনের দায় পরিশোধের জন্য ব্যবহার করেন। বাহরিয়া টাউন, মালিক রিয়াজের রিয়েল এস্টেট কোম্পানি, করাচির উপকণ্ঠে মালির জেলায় হাজার হাজার একর জমি অবৈধভাবে অধিগ্রহণ করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এই কোম্পানি আল-কাদির ট্রাস্টকে শত শত একর জমি দান করেছিল, যার একমাত্র ট্রাস্টি ইমরান খান এবং বুশরা বিবি।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে, এনএবি ইমরান খান এবং তাঁর স্ত্রী-সহ আটজনের বিরুদ্ধে এই মামলায় দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের করে। এনএবি অভিযোগ করেছে যে, ইমরান খান “পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্য উদ্দিষ্ট তহবিল অবৈধভাবে বাহরিয়া টাউনের জমি ক্রয়ের জন্য ব্যবহার করেছেন।” মামলার অন্যান্য সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা, যেমন মালিক রিয়াজ, তাঁর পুত্র আহমেদ আলি রিয়াজ, মির্জা শেহজাদ আকবর এবং জুলফি বুখারি, তদন্তে যোগ না দিয়ে পলাতক হয়েছেন এবং তাদের প্রক্লেইমড অফেন্ডার ঘোষণা করা হয়েছে।

পিটিআইয়ের ঐক্য ও রাজনৈতিক অবস্থান
গোহর আলি খান পিটিআইয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিভেদের গুজবকে উড়িয়ে দিয়েছেন, দলের ঐক্য এবং ইমরান খানের প্রতি অটল সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, “পিটিআই দেশের বেঁচে থাকা এবং নিরাপত্তার জন্য বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করবে।” এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এসেছে যখন পিটিআই গত নির্বাচনে তাদের প্রতীক ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সর্বাধিক আসন জিতলেও ক্ষমতায় আসতে পারেনি। ইমরান খান দাবি করেছেন, পিএমএল-এন এবং পিপিপি জোট গঠনের মাধ্যমে তাদের “ম্যান্ডেট চুরি” করেছে।

ইমরান খানের সম্ভাব্য জামিন এবং পিটিআইয়ের প্রতিবাদী আন্দোলন পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করতে চলেছে। আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় ১১ জুনের শুনানি ইমরান খান এবং বুশরা বিবির ভাগ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পিটিআইয়ের দাবি, এই মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তাদের নেতাকে কারাগারে রাখার একটি কৌশল। অন্যদিকে, সরকার আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার চেষ্টা করছে। ইমরান খানের মুক্তি এবং পিটিআইয়ের আন্দোলন পাকিস্তানের রাজনীতিতে নতুন মোড় আনতে পারে।

online desk
online desk
Get Bengali news updates, Bengali News Headlines , Latest Bangla Khabar, Bengali News from Kolkata
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments