রাওয়ালপিন্ডি, ২ ডিসেম্বর: পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের স্বাস্থ্য (Imran Khan health update) নিয়ে দেশজুড়ে যে গুঞ্জন ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছিল, তা আজ একটু হলেও কমেছে। রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে দুর্নীতির অভিযোগে বন্দি ইমরানকে আজ তার বোন ডক্টর উজমা খান (যাকে অনেকে ওজমা খান বলে ডাকেন) সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। জেল কর্তৃপক্ষের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইমরান সম্পূর্ণ সুস্থ এবং তাঁকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও যত্ন দেওয়া হচ্ছে।
এই সাক্ষাৎ বৈঠকটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া মৃত্যুর গুজবের মধ্যে একটা বড় স্বস্তির খবর হয়ে এসেছে, যা পিটিআই (পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ) সমর্থকদের মধ্যে তীব্র অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিল।গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইমরানের স্বাস্থ্য নিয়ে গুজবের ঝড় উঠছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে দাবি করা হয়েছিল, তাঁকে ‘ডেথ সেল’-এ রাখা হয়েছে এবং কোনো স্বাস্থ্যের আপডেট দেওয়া হচ্ছে না।
৭৮ বছর পর সাউথ ব্লকের ঠিকানা বদল PMO-র, ‘সেবা তীর্থ’-এ যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর
ইমরানের ছেলে কাসিম খান ২৭ নভেম্বর তার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লিখেছিলেন, “আমার বাবা গত ছয় সপ্তাহ ধরে একাকী কারারুদ্ধ অবস্থায় আছেন, কোনো স্বচ্ছতা নেই। তাঁর বোনদের এমনকি আদালতের অনুমতি সত্ত্বেও দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না।”
এই পোস্টের পর থেকে পিটিআই নেতাকর্মীরা রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলের বাইরে বিক্ষোভ শুরু করেন। ইমরানের তিন বোন—নুরিন নিয়াজি, আলিমা খান এবং ডক্টর উজমা খান—জেলের গেটের সামনে বসে ধর্মঘট করেন, যা ট্রাফিক জ্যাম এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে পরিণত হয়।
গত সপ্তাহে পুলিশের হাত ধরে টেনে নিয়ে যাওয়া এবং চড় মারার অভিযোগও উঠেছিল, যা পিটিআই নেতা মেহের বানো কুরেশি ‘জঙ্গলের আইন’ বলে অভিহিত করেছিলেন। আজ সকালে আদিয়ালা জেল কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে যে, ইসলামাবাদ হাইকোর্টের ২৪ মার্চের রায় অনুসারে উজমা খানকে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই অনুমতি শর্তসাপেক্ষ কোনো মিডিয়া নেই, সময় সীমিত এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার।
উজমা খান জেলে প্রবেশ করে প্রায় ৩০ মিনিটের জন্য ইমরানের সঙ্গে কথা বলেন। বাইরে এসে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ইমরান ভাই সম্পূর্ণ সুস্থ। তাঁর চুলের আগুন পর্যন্ত কেউ ছুঁতে সাহস করতে পারবে না। কিন্তু আমরা সতর্ক, কারণ কর্তৃপক্ষের কথায় বিশ্বাস করা কঠিন। এই দেখা আমাদের উদ্বেগ কমিয়েছে, কিন্তু পিটিআই-এর লড়াই থামবে না।” তিনি আরও জানান, ইমরানের শেষ সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ৫ নভেম্বরের, যেখানে তিনি নিজের অবস্থা বর্ণনা করেছিলেন।
আলিমা খানও ডয়চে ভেলে (DW)-কে বলেছিলেন, “আমরা আজ (মঙ্গলবার) জেলে যাচ্ছি, কারণ কারও কথায় ভরসা করতে পারছি না। তারা খানকে ক্ষতি করলে গুরুতর পরিণতির মুখোমুখি হবে।” এই ঘটনার পর রাওয়ালপিন্ডি এবং ইসলামাবাদে সেকশন ১৪৪ জারি করা হয়েছে, যা জনসভা নিষিদ্ধ করে। পিটিআই নেতা ব্যারিস্টার গোহার আলী খান ঘোষণা করেছিলেন, আইচিএইচ (ইসলামাবাদ হাইকোর্ট) এবং আদিয়ালা জেলের বাইরে বিক্ষোভ হবে, কারণ আদালতের রায় কার্যকর করা হচ্ছে না।
খাইবার পাখতুনখোয়া মুখ্যমন্ত্রী সোহেল আফ্রিদিও গত সপ্তাহে অষ্টমবার দেখা করতে গিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর ধর্মঘট করেছিলেন। সরকারের পক্ষে অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী টালাল চৌধুরী সতর্ক করে বলেছেন, “সেকশন ১৪৪ লঙ্ঘন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, বিচার নয়।” তবে তিনি ইমরানকে ইসলামাবাদের জেলে স্থানান্তরের বিষয়ে বলেছেন, “এখনও বলা যায় না।”
