বেলুচিস্তান: একটি হৃদয়বিদারক ও মর্মান্তিক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে পাকিস্তানের সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাতে দেখা যাচ্ছে, কীভাবে “অনার কিলিং” বা ‘সম্মানরক্ষার’ নামে এক তরুণ প্রেমিক যুগলকে (Pakistani Couple) নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনাটি ঘটেছে বেলুচিস্তান প্রদেশের কুয়েটার উপকণ্ঠে, ঈদ-উল-আধা’র কয়েকদিন আগেই।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একটি SUV ও কয়েকটি পিকআপ ভ্যানে করে একদল মানুষ এসে পৌঁছায় নির্জন এক পাহাড়ি এলাকায়। সেখানে প্রেমিক যুগল বানো বিবি ও আহসান উল্লাহ-কে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনা হয়। মহিলার মাথায় ছিল ওড়না, হাতে কুরআনের একটি কপি ধরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি সেই কুরআন হাতে নিয়ে একজন পুরুষকে বলেন, “আমার সঙ্গে সাত পা হাঁটো, তারপর তুমি আমাকে গুলি করতে পারো।”
A Girl Shot dead by there family member #Balochistanincident #Balochistan pic.twitter.com/FJdhCN6VtD
— Darab_Muhammadi (@HasanDarab50815) July 21, 2025
পুরুষটি তার অনুরোধে সাড়া দিয়ে কিছুটা হেঁটে গেলে মহিলা বলেন, “তুমি আমাকে শুধু গুলি করতে পারো, তার বেশি কিছু নয়।” এরপরই গুলির শব্দ শোনা যায়। তৃতীয় গুলির পর বানো বিবি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ভিডিওতে আরও দেখা যায়, পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন আহসান উল্লাহ-ও। চারপাশে ভিড় করে থাকা মানুষজন উল্লাসে চিৎকার করছেন।
ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই দেশজুড়ে চরম ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। মানবাধিকার কর্মীরা দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি তোলেন এবং নারীদের বিরুদ্ধে এমন নৃশংসতার বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়নের আহ্বান জানান।
বেলুচিস্তান পুলিশ জানিয়েছে, এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন বানো বিবির ভাই এবং এক প্রভাবশালী উপজাতি নেতা সরদার সাতাকজাই, যিনি এই হত্যার নির্দেশ দেন বলে অভিযোগ।
পুলিশ প্রধান নবীদ আখতার জানান, “আমরা দ্রুত তদন্ত চালাচ্ছি এবং যারা এই অপরাধে যুক্ত তাদের কাউকে ছাড়া হবে না। ভিডিও ফুটেজ এবং প্রাথমিক স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, এটি পরিকল্পিত সম্মানজনিত খুন।”
মানবাধিকার কমিশন অফ পাকিস্তান (HRCP) এর তথ্য অনুযায়ী, শুধু ২০২৪ সালেই দেশে কমপক্ষে ৪০৫টি “অনার কিলিং”-এর ঘটনা ঘটেছে। তবে বাস্তবে সংখ্যাটি আরও অনেক বেশি হতে পারে, কারণ বেশিরভাগ ঘটনাই স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপের কারণে রিপোর্ট হয় না।
নারীর পছন্দের স্বাধীনতা আজও পাকিস্তানের বহু অংশে পরিবার ও সমাজের “সম্মান” এর বিরুদ্ধে গণ্য হয়। বানো ও আহসানের এই করুণ পরিণতি আবারও দেখিয়ে দিল, সমাজে এখনও কতটা গভীরে রয়ে গেছে গোঁড়ামি এবং পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধ।
মানবাধিকার কর্মী ও সংগঠনগুলি সরকারের কাছে দ্রুত বিচার এবং “অনার কিলিং” বিরোধী আরও কঠোর ও কার্যকর আইন কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে, নিহত বানো বিবি ও আহসান উল্লাহর পরিবারের অন্য সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে, এবং পুলিশ সূত্রে খবর, আরও কয়েকজন অভিযুক্ত পলাতক রয়েছে যাদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।