চিন ও আমেরিকার সম্পর্ক: প্রতিদ্বন্দ্বিতা নাকি সহযোগিতা? কি প্রভাব ফেলবে বিশ্ব অর্থিনীতিতে

চিন ও আমেরিকার সম্পর্ক বিশ্ব রাজনীতিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল একটি বিষয়। এই সম্পর্ক কখনো সহযোগিতা, কখনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা, আবার কখনো বাণিজ্য যুদ্ধ বা সামরিক উত্তেজনার…

চিন ও আমেরিকার সম্পর্ক বিশ্ব রাজনীতিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল একটি বিষয়। এই সম্পর্ক কখনো সহযোগিতা, কখনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা, আবার কখনো বাণিজ্য যুদ্ধ বা সামরিক উত্তেজনার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। শপথ গ্রহণের পরেই চিনা পণ্যের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক লাগু করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট

চিন এবং আমেরিকা বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতি। উভয় দেশ পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল হলেও বাণিজ্য নিয়ে তাদের মধ্যে নানা টানাপোড়েন রয়েছে। চিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় আমদানি-রপ্তানি অংশীদার। আমেরিকার প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান (Apple, Tesla, Microsoft) চিন এ বিপুল ব্যবসা করে। চিন আমেরিকার কাছ থেকে আধুনিক চিপস এবং প্রযুক্তি কেনে আবার আমেরিকা চীনের তৈরি পণ্য আমদানি করে। এবার সেই পণ্যের উপরেই ধার্য হয়েছে ১০ শতাংশ শুল্ক।

   

বাণিজ্য যুদ্ধ:
২০১৮ সালে ট্রেড ওয়ার (Trade War) শুরু হয়, যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চিনা পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক (Tariff) বসান।
চিন পাল্টা আমেরিকান পণ্যের ওপর শুল্ক বসায়। বর্তমানে জো বাইডেন প্রশাসনও চীনের প্রযুক্তিগত ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে।

সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা
চিনের সেনাবাহিনী (PLA – People’s Liberation Army) এবং আমেরিকার সেনাবাহিনী (U.S. Armed Forces) বিশ্বে অন্যতম শক্তিশালী দুটি সামরিক বাহিনী। তবে কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে চিনের সেনাবাহিনী মার্কিন সেনাবাহিনীর থেকে পিছিয়ে আছে। স্টেলথ প্রযুক্তি: যুক্তরাষ্ট্রের F-22 Raptor এবং F-35 Lightning II বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত স্টেলথ ফাইটার জেট, যেখানে চীনের J-20 ও J-31 এখনো সেই মানের নয়।
অস্ত্র ব্যবস্থার ইন্টিগ্রেশন: মার্কিন সামরিক বাহিনী বিভিন্ন অস্ত্র ও সেনাবাহিনীর শাখাগুলোর মধ্যে সুসংহত নেটওয়ার্কিং এখনো মার্কিন মানে পৌঁছায়নি। মার্কিন বাহিনী বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ পরিচালনার বিশাল অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে (যেমন ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া), যেখানে চিনের সেনাবাহিনীর যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা তুলনামূলকভাবে সীমিত। চীনের শেষ বড় সামরিক সংঘর্ষ ছিল ১৯৭৯ সালের চীন-ভিয়েতনাম যুদ্ধ।

Advertisements

রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দুই দেশ COP 26 এবং COP 27 চুক্তিতে একসঙ্গে কাজ করেছে। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে দুই দেশ কিছুটা সহযোগিতা করছে। চিন তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে, কিন্তু আমেরিকা তাইওয়ানের স্বাধীনতা সমর্থন করে। হংকং ও মানবাধিকার নিয়ে আমেরিকা চিনের সমালোচনা করে। চিন শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালাচ্ছে, যা নিয়ে আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

দুই দেশের এই মিশ্র সম্পর্ক এবং বাণিজ্য যুদ্ধ প্রভাব ফেলতে পারে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এবং দুই দেশের মধ্যে উচ্চ শুল্ক (Tariff) ও নিষেধাজ্ঞা (Sanctions) বাড়বে, যার ফলে চিন তৈরি পণ্য আমেরিকায় বেশি দামে বিক্রি হবে এবং উল্টোটা ঘটবে চিনের জন্যও।
উৎপাদন খরচ ও জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে, যা বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি করবে। অনেক দেশ মাঝখানে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বিশেষ করে যেসব দেশ চীন বা আমেরিকার ওপর সরবরাহ বা বাণিজ্যের জন্য নির্ভরশীল (যেমন: ভারত, ইউরোপ, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান)। চিনা কোম্পানিগুলো (Huawei, TikTok, BYD) মার্কিন বাজার থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। আমেরিকান প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো চিনে ব্যবসা হারাবে, যার ফলে কর্মসংস্থান ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশ্বব্যাপী টেকনোলজি ডিভাইড তৈরি হবে, যার ফলে ভারত সহ উন্নয়নশীল দেশগুলো আধুনিক প্রযুক্তি থেকে বঞ্চিত হতে পারে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News