শুক্রবার ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস (Hamas) ঘোষণা করেছে যে তারা গাজায় ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির জন্য মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাবিত খসড়া নিয়ে ‘অবিলম্বে’ আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত। অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর সঙ্গে পরামর্শের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আমরা মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত যুদ্ধবিরতির খসড়া প্রস্তাবের শর্তাবলী বাস্তবায়নের জন্য অবিলম্বে এবং গুরুত্ব সহকারে আলোচনার একটি চক্রে প্রবেশ করতে প্রস্তুত।” এই ঘোষণা গাজায় প্রায় ২১ মাস ধরে চলমান সংঘাতের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
এই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ৬০ দিনের জন্য যুদ্ধ বন্ধ, জিম্মিদের মুক্তি, ফিলিস্তিনি বন্দীদের বিনিময় এবং গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবাহ বৃদ্ধির বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায় প্রস্তুত এই খসড়ায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আংশিক প্রত্যাহারের কথাও উল্লেখ রয়েছে। হামাস জানিয়েছে, তারা এই প্রস্তাবে ইতিবাচকভাবে সাড়া দিয়েছে, তবে তারা স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং গাজায় নিরবচ্ছিন্ন ত্রাণ সরবরাহের জন্য দৃঢ় গ্যারান্টি চায়।
ইসরায়েল এই প্রস্তাবে সম্মতি জানালেও প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসের অস্ত্রত্যাগ এবং তাদের নেতৃত্বের নির্বাসন ছাড়া পূর্ণ যুদ্ধবিরতি সম্ভব নয়। হামাস এই শর্ত প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে যে তারা গাজার শাসনভার একটি স্বাধীন কমিটির হাতে তুলে দিতে প্রস্তুত। এই দুই পক্ষের মধ্যে মতপার্থক্য আলোচনায় বাধা সৃষ্টি করছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে ৫৪,০০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। হামাসের হামলায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫১ জন জিম্মি হয়েছিলেন। বর্তমানে প্রায় ১০০ জন জিম্মি এখনও হামাসের হাতে রয়েছেন। যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের প্রথম ধাপে হামাস ১০ জন জীবিত জিম্মি এবং ১৮ জনের মৃতদেহ মুক্তি দেবে, এবং ইসরায়েল ফিলিস্তিনি বন্দীদের ছেড়ে দেবে।
মিশর, কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এই আলোচনা চলছে। হামাসের সর্বশেষ ইতিবাচক সাড়া গাজায় শান্তি ফিরিয়ে আনার আশা জাগিয়েছে, তবে চূড়ান্ত চুক্তি এখনও অনিশ্চিত। গাজার জনগণ দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ, ক্ষুধা এবং ধ্বংসের মধ্যে রয়েছেন, এবং এই যুদ্ধবিরতি তাঁদের জন্য ত্রাণ ও পুনর্গঠনের আশা নিয়ে এসেছে। তবে, অতীতের ব্যর্থ আলোচনার ইতিহাস বিবেচনায় এই প্রক্রিয়ার সাফল্য নির্ভর করবে উভয় পক্ষের সহযোগিতার উপর।