গাজায় হামাস যুদ্ধ-বিরতি ভঙ্গ করে বন্দি মুক্তি বন্ধ করল

ইতিহাসের অন্যতম জটিল সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে গাজা ও ইজরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি প্রায় ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। সোমবার হামাস (Hamas) তাদের পক্ষ থেকে ঘোষণা করেছে…

Hamas Halts Release of Israeli Hostages, Cites Violations of Ceasefire Agreement

ইতিহাসের অন্যতম জটিল সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে গাজা ও ইজরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি প্রায় ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। সোমবার হামাস (Hamas) তাদের পক্ষ থেকে ঘোষণা করেছে যে তারা ইজরায়েলি বন্দিদের মুক্তি প্রদান বন্ধ রাখবে যতক্ষণ না ইজরায়েল তাদের সঙ্গে করা চুক্তি পালন না করে। হামাসের মুখপাত্র আবু উবেইদা বলছেন, “ইজরায়েল যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। তাই হামাস সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সামনের দিনগুলোতে আর কোনও বন্দি মুক্তি হবে না।“

হামাসের এই পদক্ষেপের পর, ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইজরায়েল কাতজ সজাগ করে জানান, হামাস ইতোমধ্যে যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে এবং তারা গাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। কাতজের মতে, ইজরায়েলি সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তাদের সামরিক ব্যবস্থা নিতে হবে।

   

যুদ্ধ-বিরতি এবং হামাসের অভিযোগ
হামাসের মুখপাত্র আরও বলেন, ১৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধ-বিরতির পরে ইজরায়েল একাধিকবার গাজা অঞ্চলের শরণার্থীদের উত্তর গাজায় ফিরে যাওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করেছে। এছাড়া, ইজরায়েল অব্যাহতভাবে গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে সামরিক গুলিবর্ষণ এবং গোলাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। মানবিক সহায়তা প্রবাহেও বাধা দিয়েছে তারা। উবেইদা জানান, ইজরায়েলকে অবশ্যই তার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করতে হবে এবং অতীতের সকল কার্যকলাপের জন্য তারা ক্ষতিপূরণ দেবে। হামাস আরও বলেছে, ইজরায়েল তাদের শর্ত পূরণ না করলে কোনও নতুন বন্দি মুক্তি হতে পারে না।

কী ঘটেছিল এখনো পর্যন্ত?
যুদ্ধ-বিরতি চুক্তির আওতায়, প্রথম ৪২ দিনের মধ্যে মোট ৩৩ জন ইজরায়েলি বন্দির মুক্তির কথা ছিল, যার মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৬ জন মুক্তি পেয়েছেন। তাছাড়া, পাঁচজন থাই বন্দিও অবাঞ্ছিতভাবে মুক্তি পেয়েছেন। এই মুক্তির বিপরীতে, ইজরায়েল কয়েকশো ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকেই যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত বা অভিযোগ ছাড়াই আটক ছিলেন।

মীমাংসাহীনতা এবং আস্থাহীনতা
এদিকে, ইজরায়েল এবং হামাসের মধ্যে আস্থাহীনতা ক্রমশ বাড়ছে। হামাসের অভিযোগ, ইজরায়েল গাজার দিকে সহায়তার প্রবাহ অবশেষে ধীর করে দিচ্ছে, তবে ইজরায়েল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, হামাসের পক্ষ থেকে বন্দিদের মুক্তির সময়পঞ্জির আদেশের অনুসরণ ঠিকভাবে করা হয়নি, এবং এই জন্য তারা জাতীয় লাল ক্রসের মাধ্যমে বন্দিদের মুক্তি প্রদানের সময় নানা ধরণের রকমারি প্রদর্শনী করেছে।

ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অফিস জানিয়েছে যে, একটি প্রতিনিধি দল কাতারে যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করে ফিরে এসেছে, তবে তারা ফিরে আসার পরও কোনও সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানায়নি। প্যালেস্টাইনি পক্ষের এক কর্মকর্তা বলেন, ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে আস্থাহীনতার কারণে শান্তি আলোচনা ধীরগতিতে চলছে।

ট্রাম্পের মন্তব্য এবং ভবিষ্যৎ গাজার জন্য উদ্বেগ
অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে সেখানে একটি রিয়েল এস্টেট প্রকল্প তৈরির কথা বলেছেন। তার এই মন্তব্য গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভিন্ন ধারণা সৃষ্টি করেছে। নেতানিয়াহু ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানিয়ে এই পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছেন। মিসরের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি অত্যন্ত অস্বস্তিকর, কারণ মিশরই যুদ্ধ-বিরতি চুক্তির মধ্যস্থতা করছে।

অন্যদিকে, ইজরায়েলী সেনাবাহিনী গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো বড় সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি, এবং সেখানে সাহায্য পাঠানোর বিষয়েও সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের বন্দি মুক্তির আলোচনাও ধীরগতিতে চলছে, এবং বড় কোনো অগ্রগতি এখনও দেখা যায়নি।

নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ: এক সংঘাতের শেষ কোথায়?
এই মুহূর্তে, যুদ্ধ-বিরতি চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দেহ এবং সংশয় দেখা দিয়েছে। উভয় পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিশ্বাসের অভাব শান্তির পথে বাধা সৃষ্টি করেছে। বন্দি বিনিময়ের চুক্তি এবং মানবিক সহায়তা প্রবাহের মধ্যে বড় ধরনের ভেদাভেদ থাকার কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
যদিও যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, তবে তা বাস্তবায়িত হওয়া পর্যন্ত শান্তির পথে কতটা অগ্রগতি সম্ভব তা সময়ই বলবে।