কানাডায় জি-৭ বৈঠকে রাশিয়াকে শান্তি আলোচনায় ফেরাতে কূটনৈতিক চাপ বাড়ানোর পরিকল্পনা

কানাডার নায়াগ্রা-অন-দ্য-লেক অঞ্চলে বুধবার অনুষ্ঠিত জি-৭ (G7 Ukraine) বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ এবং রাশিয়াকে আলোচনায় ফেরানোর উপায় নিয়ে গভীর আলোচনা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর নেতৃত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা, যিনি মিত্র দেশগুলিকে ইউক্রেনের দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতা বাড়ানো ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান।

Advertisements

সিবিহা বৈঠকের পরে বলেন, “আমাদের প্রয়োজন রাশিয়ার যুদ্ধের খরচ বাড়িয়ে তোলা, যাতে পুতিন ও তার প্রশাসন বাধ্য হয় যুদ্ধ শেষ করতে।” তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক জ্বালানি নিষেধাজ্ঞাকে “গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ” বলে উল্লেখ করেন।

   

কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনিতা আনন্দ নতুন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে জানান, রাশিয়ার ড্রোন প্রোগ্রাম, তরল প্রাকৃতিক গ্যাস সংস্থা (LNG entities), ও “শ্যাডো ফ্লিট” জাহাজগুলির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তার মন্তব্য, “রাশিয়া যতদিন আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে যুদ্ধ চালাবে, ততদিন আমরা চাপ বাড়াব।”

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কায়া কালাস বলেছেন, “রাশিয়া এখনো তার যুদ্ধলক্ষ্য পরিবর্তন করেনি। শান্তির কথা বললেও তা কৌশল মাত্র। তাই তাদের ওপর আরও কঠোর চাপ প্রয়োজন।”

অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগস্ট মাসে আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন–এর সঙ্গে এক শীর্ষ বৈঠক করেন। তিনি ইউক্রেনে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান, কিন্তু রাশিয়া দাবি করে কিয়েভ আরও ভূখণ্ড ছেড়ে দিক। এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে রাশিয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ বাড়ছে।

Advertisements

জি-৭ বৈঠকে আলোচ্য তালিকায় আনুষ্ঠানিকভাবে না থাকলেও, মার্কিন সামরিক বাহিনীর ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে পরিচালিত নৌ অভিযান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন একাধিক মন্ত্রী। ওয়াশিংটন এখন পর্যন্ত অন্তত ১৯টি হামলা চালিয়েছে সন্দেহভাজন মাদকবাহী নৌকায়, যাতে ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল ব্যারো বলেন, “এই হামলাগুলি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে এবং ফ্রান্সের বিদেশি ভূখণ্ডে থাকা নাগরিকদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে।” এক ইউরোপীয় কূটনীতিকের বক্তব্য, “জি-৭ বৈঠকই হচ্ছে এমন বিতর্কিত বিষয় আলোচনার সঠিক মঞ্চ, কারণ ক্যারিবিয়ানে মার্কিন অভিযান নিয়ে সকলের উদ্বেগ রয়েছে।”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এই হামলাগুলি জাতিসংঘ সনদের ৫১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আত্মরক্ষার আওতায় পরিচালিত হয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘের স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের মতে, “প্রমাণ থাকলেও, আন্তর্জাতিক জলসীমায় এভাবে প্রাণঘাতী হামলা আইনবিরোধী ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শামিল।”

ব্রিটেন ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মাদকবিরোধী গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় বন্ধ করেছে, এবং কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোও মার্কিন সংস্থাগুলির সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত রেখেছেন যতদিন না এই হামলা বন্ধ হয়।