‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান দিয়ে হামলা! রক্তাক্ত ফ্রান্স

france-oleron-island-terror-attack-10-injured

প্যারিস: ফের রক্তাক্ত ফ্রান্স। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চারান্ত-ম্যারিটাইমের ওলরোঁ দ্বীপে (Oléron Island) মঙ্গলবার গভীর রাতে ঘটে গেল ভয়াবহ জঙ্গি হামলা। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, এক ব্যক্তি “আল্লাহু আকবার” চিৎকার করতে করতে গাড়ি চালিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে পথচারী এবং সাইকেল আরোহীদের উপর তুলে দেন। ঘটনায় কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

Advertisements

ফরাসি পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্তকে ঘটনাস্থলেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তার গাড়িটি স্থানীয় বাজার এলাকার এক রাস্তার পাশে উলটে যায়। গাড়ি থেকে তাকে আটক করার সময়ও সে ধর্মীয় স্লোগান দিতে থাকে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। বর্তমানে ওই ব্যক্তি পুলিশের জেরায় রয়েছে এবং তার পরিচয় ও জঙ্গি সংযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

   

২০২৬-এর নির্বাচন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘চ্যালেঞ্জ’ থলপতির!

ঘটনাটি ঘটে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত প্রায় সাড়ে দশটার দিকে। বেশ কিছু পরিবার তখন বাজার থেকে ফেরার পথে ছিল। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, “গাড়িটা আচমকা হর্ন বাজাতে বাজাতে সবাইকে লক্ষ্য করে উঠে গেল। আমি পাশে পড়ে গিয়ে প্রাণে বেঁচে গেছি।” এলাকাজুড়ে মুহূর্তের মধ্যে চিৎকার, কান্না, আর বিশৃঙ্খলার দৃশ্য তৈরি হয়।

পুলিশ ও জরুরি পরিষেবা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের কাছের হাসপাতালে নিয়ে যায়। ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানিন জানিয়েছেন, “এই ঘটনা ইচ্ছাকৃত হামলা বলেই মনে হচ্ছে। তদন্ত সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিটের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।”

পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তের বয়স প্রায় ৩০-এর কোঠায়। সে ফরাসি নাগরিক, তবে তার উগ্রপন্থী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ আছে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তার ঘর থেকে কিছু ধর্মীয় বই ও অনলাইন চ্যাটের নথি উদ্ধার হয়েছে, যা জঙ্গি প্ররোচনার ইঙ্গিত দিতে পারে।

Advertisements

ফ্রান্সে এর আগেও এমন একাধিক ভয়াবহ হামলার নজির রয়েছে। ২০১৬ সালে নিস শহরে (Nice) এক ব্যক্তি ট্রাকে চেপে জনতার উপর উঠে ৮৬ জনকে হত্যা করেছিল। সেই ভয়াবহ স্মৃতি এখনও অনেকের মনে দাগ কেটে রয়েছে। ফলে, ওলরোঁ দ্বীপের এই হামলা নতুন করে আতঙ্কের ছায়া ফেলেছে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং টুইটারে লিখেছেন, “আবারও আমাদের দেশ অন্ধকারের মুখোমুখি। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। নিরাপত্তা সংস্থাগুলি সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে।” অন্যদিকে স্থানীয় প্রশাসন পুরো এলাকাকে ঘিরে রেখেছে এবং বাসিন্দাদের অপ্রয়োজনে বাইরে না বেরোনোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ফ্রান্সে বিগত কয়েক মাস ধরে ধর্মীয় উগ্রপন্থা এবং প্ররোচনামূলক বক্তব্যের হার বেড়েছে। সরকার কঠোর হাতে দমননীতি নিলেও, এককভাবে ‘লোন উলফ’ ধরনের হামলা ঠেকানো এখনো চ্যালেঞ্জ। পুলিশের এক সিনিয়র অফিসার বলেন, “এটি হয়তো সংগঠিত নয়, তবে ব্যক্তিগতভাবে প্ররোচিত হামলা।

এই ধরনের ঘটনা সমাজে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করতে পারে।” ফ্রান্সের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করা হয়েছে, এবং দেশজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও জনবহুল স্থানে পুলিশ টহল বাড়ানো হয়েছে।ওলরোঁ দ্বীপের হামলা আবারও মনে করিয়ে দিল শান্তিপ্রিয় ফ্রান্স এখনো ধর্মীয় উগ্রতার ছায়া থেকে পুরোপুরি মুক্ত নয়।