নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ঝালানাথ খানালের স্ত্রী (Prime Ministers Wife) রাজ্যলক্ষ্মী চিত্রকর মঙ্গলবার আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন। কাঠমান্ডুর ডাল্লু এলাকায় তাঁদের বাসভবনে জেন-জির একটি দল আগুন ধরিয়ে দেয়। রাজ্যলক্ষ্মী তখন বাড়ির ভিতরে ছিলেন। তিনি গুরুতরভাবে দগ্ধ হন এবং কির্তিপুর বার্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে, চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
মঙ্গলবার সকালে কাঠমান্ডুর ডাল্লু এলাকায় ঝালানাথ খানালের বাসভবনে বিক্ষোভকারীরা হামলা চালায়। রাজ্যলক্ষ্মী চিত্রকর তাঁর ছেলে নির্ভিক খানালের সঙ্গে বাড়িতে ছিলেন। ঠিক সেই সময় বিক্ষোভকারীরা বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনের মধ্যে আটকে পড়ে তিনি গুরুতরভাবে দগ্ধ হন, এবং তাঁর ফুসফুসে গুরুতর ক্ষতি হয়।
নেপাল সেনাবাহিনী ঝালানাথ খানালকে আগুন লাগার আগে উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও, রাজ্যলক্ষ্মীকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। তাঁকে প্রথমে ছাউনির নেপালি আর্মি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে কির্তিপুর বার্ন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তবে, তাঁর অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর ছিল, এবং চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো যায়নি।
নেপালে চলতে থাকা জেন-জি আন্দোলন মূলত সরকারের ২৬টি সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধকরণের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছিল। এই নিষেধাজ্ঞা সরকার দুর্নীতি ও সমালোচনা দমনের জন্য আরোপ করেছিল বলে বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন। এই আন্দোলন দ্রুত দুর্নীতি, নেপোটিজম এবং অর্থনৈতিক অসমতার বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর প্রতিবাদে রূপান্তরিত হয়।
সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে কমপক্ষে ২২ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী কে.পি. শর্মা ওলির বাসভবন, সংসদ ভবন, সুপ্রিম কোর্ট এবং অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে ।
এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী ওলি পদত্যাগ করেন, এবং রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেলও পদত্যাগ করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে, যদিও নেপাল সেনাবাহিনী রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
ঝালানাথ খানাল, যিনি ২০১১ সালে নেপালের ৩৫তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, তিনি সিপিএন (ইউনিফাইড সোশ্যালিস্ট) পার্টির একজন বর্ষীয়ান নেতা। তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু নেপালের রাজনৈতিক মহলে শোকের ছায়া ফেলেছে।
বিক্ষোভকারীরা শুধুমাত্র খানালের বাড়িই নয়, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল (প্রচন্ড), শের বাহাদুর দেউবা এবং অন্যান্য নেতাদের বাসভবনেও হামলা চালিয়েছে। এছাড়া, সুপ্রিম কোর্ট এবং সিঙ্গা দরবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনায়ও আগুন ধরানো হয়েছে।
‘ফেভারিটের তকমা’ উড়িয়ে কড়া বার্তা সূর্যের, পাল্টা জবাব পাক অধিনায়কের
নেপাল সেনাবাহিনী এই হিংসাত্মক ঘটনার জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং জনগণকে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সংযমী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছে। তারা শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছে। সেনাবাহিনীর প্রধান শীঘ্রই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন বলে জানা গেছে। এছাড়া, কাঠমান্ডু এবং বিরগঞ্জে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে।