ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি (Foreign Secretary) আগামী রবিবার থেকে নেপালে দুদিনের সরকারি সফর শুরু করবেন। নেপালের বিদেশ সচিব আমৃত বাহাদুর রাইয়ের আমন্ত্রণে এই সফরে তিনি নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির আগামী মাসে ভারত সফরের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে কাঠমান্ডুতে বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেবেন।
ভারত ও নেপালের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে এই সফরটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ভারতের ‘নেবারহুড ফার্স্ট’ নীতির আওতায় নেপালের সঙ্গে সম্পর্ককে উচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়, এবং এই সফর দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে।
বিক্রম মিশ্রির এই সফরের মূল লক্ষ্য হল নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির সেপ্টেম্বরে প্রস্তাবিত ভারত সফরের জন্য কূটনৈতিক ভিত্তি তৈরি করা। সফরকালে তিনি নেপালের বিদেশ সচিব আমৃত বাহাদুর রাইয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করবেন। এই আলোচনায় বিশেষ জোর দেওয়া হবে সংযোগ (কানেকটিভিটি), উন্নয়ন সহযোগিতা এবং পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর উপর।
এছাড়া, মিশ্রি নেপালের প্রধানমন্ত্রী ওলি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অর্জু রানা দেউবা এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ করবেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পক্ষ থেকে ওলির জন্য একটি আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণপত্রও তিনি হস্তান্তর করবেন।
ভারত ও নেপালের মধ্যে দীর্ঘদিনের ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে, যা ‘রোটি-বেটি’ সম্পর্ক হিসেবে পরিচিত। স্থলবেষ্টিত নেপাল তার বাণিজ্য, পরিবহন এবং পরিষেবার জন্য ভারতের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
ভারতের মাধ্যমে নেপাল সমুদ্রপথে প্রবেশাধিকার পায় এবং তার বেশিরভাগ আমদানি ভারত থেকে বা ভারতের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশের মধ্যে শক্তি, সংযোগ এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
মিশ্রির এই সফরে ভারত-নেপাল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক, বিশেষ করে ভারত-সমর্থিত প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হবে। সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হোম সেক্রেটারি পর্যায়ের বৈঠক এবং সীমান্ত কার্যক্রম গ্রুপের সপ্তম বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক আইনি সহায়তা (এমএলএ) চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং সুস্তা ও কালাপানি বাদে সীমান্ত কাজ তিন বছরের মধ্যে সম্পন্ন করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এই সফরে এই চুক্তিগুলো স্বাক্ষরের বিষয়ে আরও অগ্রগতি হতে পারে।
নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি, যিনি গত জুলাইয়ে চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় এসেছেন, এখনও ভারতে সরকারি সফর করেননি। তিনি ঐতিহ্যগতভাবে প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে ভারতের পরিবর্তে চীনকে বেছে নিয়েছিলেন, যা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল।
তবে, বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে ব্যাঙ্কক এবং নিউইয়র্কে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর বৈঠক দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। ওলির প্রস্তাবিত ভারত সফর ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে পারে, এবং এটি দুই দিনের পরিবর্তে তিন বা চার দিনে বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এই সফরে ওলি দিল্লির বাইরে ধর্মীয় বা শিল্প এলাকা পরিদর্শন করতে পারেন, যা মিশ্রির সফরে চূড়ান্ত হবে।
২০১৯ সালে কালাপানি অঞ্চল নিয়ে ভারত-নেপাল সীমান্ত বিরোধের পর থেকে দুই দেশের সম্পর্কে কিছুটা টানাপোড়েন দেখা গিয়েছিল। ওলির চীন সফর এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে চুক্তি স্বাক্ষর এই উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়েছিল। তবে, মিশ্রির এই সফর এবং ওলির আসন্ন ভারত সফর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের একটি সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কলকাতায় বন্ধ ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ ট্রেলার লঞ্চ! ‘এটা কি ফ্যাসিবাদ নয়?’ ক্ষোভে ফুঁসলেন বিবেক
বিক্রম মিশ্রির নেপাল সফর ভারত-নেপাল সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই সফরের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা, বাণিজ্য এবং উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা উন্মোচিত হবে। ওলির ভারত সফরের প্রস্তুতি এবং দ্বিপাক্ষিক চুক্তির অগ্রগতি এই সফরের ফলাফলের উপর নির্ভর করবে। ভারতের ‘নেবারহুড ফার্স্ট’ নীতির অধীনে নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে বলে আশা করা হচ্ছে।