ইসলামাবাদ: আদিয়ালা জেলে ইমরান খানের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়েছে। এই আবহেই পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের ঝড় তুললেন জামিয়াত উলামা-ই-ইসলাম (জেইউআই-এফ)-এর প্রধান মৌলানা ফজলুর রহমান। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং দেশের শীর্ষ সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে এমন কঠোর ভাষায় আক্রমণ খুব কমই শোনা যায়। কিন্তু রবিবার এক জনসভায় ফজলুর রহমান যে মন্তব্য করেন, তা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
মৌলানা ফজলুর রহমান সরাসরি অভিযোগ করেন পাকিস্তানের সেনা নেতৃত্ব বর্তমান দেশের পরিস্থিতি জনগণের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে চাইছে। “সত্য লুকিয়ে রাখা যাবে না। জনগণ সব জানে আপনাদেরও চেনে, আপনাদের অতীতও চেনে,” বলেন তিনি। তিনি আরও যোগ করেন, “যে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে, দাম আকাশছোঁয়া, বেকারত্ব তীব্র এই অবস্থার জন্য কে দায়ী, সেটা জনগণ খুব ভালো করেই বোঝে। বারবার ব্যর্থতার পরও সেনা নেতৃত্ব নিজেদের দায় স্বীকার করছে না।”
সবুজ-মেরুনের দায়িত্ব প্রসঙ্গে কী বললেন লোবেরা?
সবচেয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে ফজলুর রহমানের সেই মন্তব্য, যেখানে তিনি ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কথা তুলে আনেন। তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে ভারতের সেনার সামনে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এমন দুর্বলতা দেখিয়েছিল যে তারা আমাদের ‘নাক কেটে’ দিয়েছে।
হিন্দুদের সামনে দেশের মুখ পুড়িয়েছে।” এই বক্তব্য পাকিস্তানে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কারণ ১৯৭১ সালের পরাজয় পাকিস্তানের জাতীয় ইতিহাসের সবচেয়ে সংবেদনশীল অধ্যায়। সে সময় পাকিস্তানের ৯৩ হাজার সেনা ভারতে আত্মসমর্পণ করে, যা সামরিক ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ আত্মসমর্পণ হিসেবে গণ্য।
মৌলানা ফজলুর রহমান বলেন, “সেনা নেতৃত্বের সেই ভুলের মূল্য এখনও পাকিস্তান দিচ্ছে। আজও একই মানসিকতা চলছে ভুল ঢাকো, সত্য গোপন করো, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে দমন করো, কিন্তু জনগণের আস্থা ফেরাতে কোনও বাস্তব পদক্ষেপ নিও না।” আজ পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক দেউলিয়া অবস্থা এবং নিরাপত্তাহীনতা চরমে। ফজলুর রহমান মনে করেন, দেশের রাজনীতি ও প্রশাসনে সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত হস্তক্ষেপই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
তিনি বলেন, “দেশকে টেনে তলানিতে নামিয়ে এনেছে যারা, তারা আজ নিজেদের নায়ক সাজাতে চাইছে। কিন্তু জাতি ভুলবে না আপনারা কী করেছেন এবং কী করতে ব্যর্থ হয়েছেন।” এই মন্তব্যের রাজনৈতিক তাৎপর্যও গভীর। কারণ পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করা সাধারণত রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।
ইমরান খানও সেনা নেতৃত্বের সমালোচনা করেছিলেন এবং তার ফল হয়েছিল কারাবাস ও দল ভাঙনের আকারে। তবুও ফজলুর রহমানের এই বক্তব্য প্রমাণ করে, পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা যে কোথায় পৌঁছেছে, এবং সেনা প্রতিষ্ঠানের প্রতি যে ক্ষোভ বাড়ছে, তাও স্পষ্ট।
মৌলানা ফজলুর রহমানের বক্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই পাকিস্তানের সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। একাংশ বলছে “অবশেষে কেউ সত্য বলার সাহস দেখাল।” অন্যদিকে সেনা সমর্থকরা এই মন্তব্যকে “রাষ্ট্রদ্রোহী” বলে আখ্যা দিচ্ছে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই মন্তব্য সেনা-রাজনীতি সম্পর্ককে আরও উত্তপ্ত করবে। আগামী নির্বাচনের আগে এর রাজনৈতিক প্রভাবও গভীর হতে পারে।
