তুরবাতে সেনাবাহিনীর বাসে বিস্ফোরণ, দায় স্বীকার বালোচ লিবারেশন আর্মির

তুরবাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি বাসে রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এই ঘটনার ফলে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এই হামলার…

Baloch Liberation Army Claims Responsibility

তুরবাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি বাসে রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এই ঘটনার ফলে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এই হামলার দায় স্বীকার করেছে বালোচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)।

ঘটনার বিবরণ
তুরবাত, পাকিস্তানের বালোচিস্তান প্রদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। শনিবার সন্ধেয় সেনাবাহিনীর একটি বাসে এই বিস্ফোরণ ঘটে। সূত্র মতে, এই বিস্ফোরণটি অত্যন্ত পরিকল্পিত ছিল এবং রিমোট কন্ট্রোল প্রযুক্তি ব্যবহার করে এটি চালানো হয়।

   

বাসটি সেনাসদস্যদের বহন করছিল। বিস্ফোরণের তীব্রতায় বাসটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে বহু সেনাসদস্য নিহত হন এবং আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। বিস্ফোরণের ফলে আশপাশের এলাকাতেও ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

বিএলএ-এর দায় স্বীকার
এই হামলার দায় স্বীকার করে বালোচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। সংগঠনটি দাবি করেছে, এই হামলা তাদের স্বাধীনতার লড়াইয়ের অংশ। বিএলএ নেতা বশির জ়েব বালোচ বলেছেন, “যুদ্ধ কখনোই মার্জিত বা শালীন পন্থায় লড়া যায় না। আমাদের লড়াই এমন পর্যায়ে পৌঁছে দিতে হবে যেখানে ইসলামাবাদ, পাঞ্জাব, রাওয়ালপিন্ডি, লাহোর এবং গুজরানওয়ালার মানুষ রাস্তায় নেমে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। তারা বলতে বাধ্য হবে, এখন যুদ্ধ বন্ধ করো এবং বেলুচিস্তানে শান্তি ফিরিয়ে আনো।”

ফিদায়ি কমান্ডার আত্তা বালোচ বলেন, “আমরা বহুবার স্পষ্টভাবে জানিয়েছি যে, বালোচ মাতৃভূমিতে বালোচ সম্মতি ছাড়া কোনো বিদেশী শক্তিকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। যারা এই আইন লঙ্ঘন করবে, তাদের ফল ভোগ করতে হবে।” বালোচ নেতাদের এই ধরনের মন্তব্য স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, বেলুচিস্তানে স্বাধীনতার লড়াই আরও তীব্রতর করতে চাইছে বিএলএ।

বালুচিস্তান: সহিংসতার কেন্দ্রবিন্দু
বালুচিস্তান দীর্ঘদিন ধরেই সহিংসতার কেন্দ্রবিন্দু। পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় প্রদেশ হলেও এটি অবহেলিত এবং দারিদ্র্যপীড়িত। এখানকার মানুষ বহুদিন ধরে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে আসছে।

বালুচিস্তানের স্বাধীনতার দাবিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। এদের মধ্যে বালোচ লিবারেশন আর্মি সবচেয়ে সক্রিয়। বিএলএ-এর মতে, বালুচিস্তান থেকে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করে পাকিস্তানের অন্যান্য অঞ্চলে উন্নয়ন ঘটানো হলেও এখানকার মানুষ সেই উন্নয়নের অংশীদার হতে পারে না।

পাকিস্তান সরকারের প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তান সরকার এই হামলাকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে অভিহিত করেছে। সরকার বলেছে, বালুচিস্তানে শান্তি বজায় রাখতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বালুচিস্তানে সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর উপস্থিতি আরও বাড়ানো হবে বলে জানানো হয়েছে।

তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, বালুচিস্তানে সেনা অভিযান চালানোর ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। সহিংসতা কমানোর পরিবর্তে এটি আরও বাড়ছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
বালুচিস্তানের সহিংসতা আন্তর্জাতিক মহলের নজরে এসেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বহুদিন ধরে বালুচিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। তারা বলছে, এই অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচারিত এবং অবহেলিত।

তুরবাতের এই বিস্ফোরণ বালুচিস্তানের পরিস্থিতিকে আবারও আন্তর্জাতিক মঞ্চে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। বিএলএ-এর দাবি এবং পাকিস্তান সরকারের প্রতিক্রিয়া নতুন করে এই সংঘাতের দিক নির্দেশ করবে। তবে এটি স্পষ্ট যে, বালুচিস্তানের শান্তি এবং স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।

এই ঘটনা আরও একবার প্রমাণ করল যে, বালুচিস্তানের সংকট শুধুমাত্র সামরিক ব্যবস্থা দিয়ে সমাধান করা সম্ভব নয়। অঞ্চলটির মানুষকে তাদের অধিকার এবং উন্নয়নের সুযোগ দিতে হবে। অন্যথায়, এই সংঘাত আরও তীব্র হয়ে উঠবে।