ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বুধবার ঘোষণা করল একটি নতুন কৌশলগত এজেন্ডা, যা ভারত-ইইউ (EU-India) সম্পর্ককে আগের তুলনায় আরও গভীর ও বহুমুখী করে তুলবে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন ব্রাসেলস থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “ইউরোপ ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। আমরা বছরের শেষের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করতে চাই। ইউরোপ ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত এবং আমরা ভারতের সঙ্গে ভবিষ্যতে যৌথ বিনিয়োগে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
এদিনই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ৭৫তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানান ভন ডার লেয়েন। প্রধানমন্ত্রী প্রতিক্রিয়ায় এক্স-এ লিখেছেন, “ভারত ও ইইউ সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে প্রস্তুত। এটি আমাদের যৌথ লক্ষ্য ও দায়িত্ব। আমরা ইউক্রেন সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
নতুন কৌশলগত এজেন্ডার দিকনির্দেশ
নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইইউ-ভারত সম্পর্ককে পাঁচটি মূল স্তম্ভে সাজানো হয়েছে—
বাণিজ্য ও টেকসই সমৃদ্ধি:
ভারত-ইইউ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) ২০২৫ সালের মধ্যে চূড়ান্ত করার লক্ষ্য।
দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগে সুযোগ বাড়ানো এবং সরবরাহ শৃঙ্খলকে বৈচিত্র্যময় করা।
প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন সহযোগিতা:
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), সেমিকন্ডাক্টর, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটিং ও মহাকাশ প্রযুক্তিতে যৌথ কাজ।
গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে যৌথ বিনিয়োগ বৃদ্ধি।
নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব:
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যৌথ নিরাপত্তা উদ্যোগ।
সাইবার প্রতিরক্ষা, সন্ত্রাসবাদ দমন এবং প্রতিরক্ষা শিল্পে সহযোগিতা।
ইউক্রেন যুদ্ধ ও রাশিয়ার নৌবহরের মোকাবিলায় সমন্বিত পদক্ষেপ।
সংযোগ ও বৈশ্বিক শাসন ব্যবস্থা:
জাতিসংঘ সংস্কার, WTO আধুনিকীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবাধিকার নিয়ে সমন্বিত পদক্ষেপ।
আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে যৌথ ভূমিকা শক্তিশালী করা।
মানবসম্পদ ও সংস্কৃতি:
দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, বিশেষ করে ডিজিটাল সেক্টরে।
শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের বিনিময় কর্মসূচি জোরদার।
সংস্কৃতি ও ব্যবসায়ী মহলের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সংযোগ বাড়ানো।
কেন এই সম্পর্ক জরুরি?
বিশ্ব রাজনীতির বর্তমান পরিস্থিতিতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র আকার ধারণ করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ইউরোপ ভারতকে একটি “বিশ্বাসযোগ্য ও দীর্ঘমেয়াদি অংশীদার” হিসেবে দেখছে। ভারতও তার ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বাড়াতে ইইউ-এর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে আগ্রহী।
Always a pleasure to speak to President Ursula von der Leyen. Thank you for your warm birthday greetings. Delighted to know about the 'New Strategic EU-India Agenda' adopted today. India is ready to take the India-EU relationship to the next level. It is our shared commitment,…
— Narendra Modi (@narendramodi) September 17, 2025
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউরোপ ও ভারতের মধ্যে এই নতুন কৌশলগত এজেন্ডা শুধু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত করবে না, বরং বিশ্ব অর্থনীতি ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নতুন ভারসাম্য আনবে। মুক্ত বাণিজ্য, প্রযুক্তিগত সহযোগিতা এবং প্রতিরক্ষা উদ্যোগ মিলিয়ে ভারত-ইইউ অংশীদারিত্ব আগামী দিনে বৈশ্বিক কূটনীতিতে এক নতুন অধ্যায় রচনা করবে।