গত কয়েক দিন ধরে আমেরিকার (USA) একাধিক সমাজমাধ্যমে ভারত-বিরোধী মন্তব্য ও মতামত তীব্রভাবে আলোচিত হচ্ছে। বিশেষ করে, অতি-দক্ষিণপন্থী ব্যক্তিরা এসব মন্তব্য করছেন, যাদের মন্তব্যে বর্ণবিদ্বেষের গন্ধও পাওয়া যাচ্ছে। ভারতীয়দের সম্পর্কে এই ধরনের বৈষম্যমূলক এবং অবমাননাকর কথাবার্তা ছড়িয়ে পড়ে সাম্প্রতিক সময়ে, যা অনেক ভারতীয়কে ক্ষুব্ধ করেছে। তবে, এই পরিস্থিতির মধ্যে কানাডিয়ান সঙ্গীতশিল্পী গ্রাইমস, যিনি ইলন মাস্কের (Elon Musk) প্রাক্তন বান্ধবী হিসেবেও পরিচিত, সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টের মাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
সিরিয়ায় পরমাণু বোমা নিক্ষেপ ইজরায়েলের, B-61 বোমার আঘাতে ভূমিকম্প মধ্যপ্রাচ্যে
গ্রাইমস, যার আসল নাম ক্লেয়ার এলিস বুশে (Clear Elise Bush), আমেরিকান সংস্কৃতির সঙ্গে ভারতীয় সংস্কৃতির মেলবন্ধন এবং তার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এই বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি তার সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “ভারতীয় সংস্কৃতি আমেরিকান সংস্কৃতির সঙ্গে খুব সুন্দর ভাবে মিশে যায়। আমার সৎবাবা ভারতীয়। বাড়িতে ভারতীয়-আমেরিকান দুই সংস্কৃতিই ছিল। আমার ছোটবেলা দুর্দান্ত কেটেছে।” এর মাধ্যমে তিনি ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি তার ব্যক্তিগত ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন।
গ্রাইমসের মতে, এই ধরনের বিদ্বেষমূলক মন্তব্যগুলো পরিকল্পনা করে ছড়ানো হচ্ছে এবং এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক। তিনি আরও বলেন, “এটি কোনো সাধারণ ব্যাপার নয়, এটি সজাগভাবে একটা বিপথগামী প্রচারণার অংশ হতে পারে।” তার মন্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, তিনি বিশ্বাস করেন যে এই ধরনের ভারত-বিরোধী মন্তব্যের পেছনে কোনো সুক্ষ্ম রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে, যা সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে এবং এর ফলে দেশের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়তে পারে।
বিশ্বব্যাপী নানা সময়ে এ ধরনের বিতর্কিত মন্তব্য উঠে এসেছে, যেখানে একটি নির্দিষ্ট জাতি বা গোষ্ঠীর প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ করা হয়। গ্রাইমসের এই প্রতিবাদ, আসলে একটি ইতিবাচক এবং প্রয়োজনীয় প্রতিক্রিয়া। তার মতে, ভারতীয়দের প্রতি এমন বিদ্বেষমূলক মনোভাব সমাজের জন্য ক্ষতিকর এবং তা সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। তিনি আরও বলেন, যে কোনো জাতির প্রতি এই ধরনের বৈষম্য ও ঘৃণা মূলক মনোভাব, সমাজে বিভাজন তৈরি করে, যা সবাইকে একসঙ্গে চলতে বাধাগ্রস্ত করে।
১০০ করে থামল জীবন, প্রয়াত নোবেলজয়ী প্রাক্তণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার
এছাড়া, গ্রাইমস তার জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন, যেখানে তিনি জানিয়েছেন যে, তার সৎবাবা ভারতীয় এবং তাদের পরিবারে ভারতীয় ও আমেরিকান সংস্কৃতির সুন্দর মেলবন্ধন ছিল। তার কথায়, তিনি ছোটবেলায় ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত ছিলেন এবং সেই সময়টি তার জন্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও সুন্দর ছিল। গ্রাইমসের এই মন্তব্য সমাজে ভারতীয় সংস্কৃতির ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরছে এবং বিদ্বেষমূলক মনোভাবের বিরুদ্ধে শক্তিশালী একটি অবস্থান সৃষ্টি করছে।
কৃষকদের ডাকা ধর্মঘটের জেরে স্তব্ধ রেল-যান চলাচল, বেকায়দায় জনজীবন
এখন প্রশ্ন হলো, কেন কিছু ব্যক্তি এবং গোষ্ঠী এই ধরনের ভারত-বিরোধী মন্তব্য করছে? এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়, তবে এর ব্যাপকতা এবং সাম্প্রতিক সময়ে এর বেড়ে যাওয়া ভারতীয়দের মধ্যে চিন্তা ও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক, সামাজিক, এবং সাংস্কৃতিক পরিপ্রেক্ষিতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তবে, গ্রাইমসের মতো ব্যক্তি যদি তাদের বক্তব্য দিয়ে একটি ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করেন, তাহলে ভারতীয় সমাজের প্রতি এই ধরনের বৈষম্য ও ঘৃণামূলক মনোভাব মোকাবেলা করা অনেকটাই সহজ হবে।