ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি (এনসিএস) জানিয়েছে, সোমবার তিব্বতে (tibet) রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এনসিএস-এর তথ্য অনুযায়ী, এই ভূমিকম্পটি মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরতায় ঘটেছে, যা এটিকে আফটারশকের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
এনসিএস এক্স-এ একটি পোস্টে জানিয়েছে
এনসিএস এক্স-এ একটি পোস্টে জানিয়েছে, “ইকিউ অফ এম: ৫.৭, তারিখ: ১২/০৫/২০২৫, সময়: ০২:৪১:২৪ আইএসটি, অক্ষাংশ: ২৯.০২ উত্তর, দ্রাঘিমাংশ: ৮৭.৪৮ পূর্ব, গভীরতা: ১০ কিমি, অবস্থান: তিব্বত (tibet)।”
অগভীর ভূমিকম্পগুলো গভীর ভূমিকম্পের তুলনায় বেশি বিপজ্জনক কারণ এগুলো পৃথিবীর পৃষ্ঠের কাছাকাছি বেশি শক্তি নির্গত করে। এর ফলে মাটির কম্পন তীব্র হয় এবং কাঠামোর ক্ষতি ও হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। গভীর ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে শক্তি পৃষ্ঠে পৌঁছানোর আগেই অনেকাংশে হ্রাস পায়।
তিব্বতীয় মালভূমি তার ভূ-টেকটনিক প্লেট সংঘর্ষ (tibet)
তিব্বতীয় (tibet) মালভূমি তার ভূ-টেকটনিক প্লেট সংঘর্ষের কারণে সিসমিক কার্যকলাপের জন্য কুখ্যাত। তিব্বত (tibet) এবং নেপাল একটি প্রধান ভূতাত্ত্বিক ফল্ট লাইনের উপর অবস্থিত, যেখানে ভারতীয় টেকটনিক প্লেট ইউরেশীয় প্লেটের সঙ্গে সংঘর্ষ করে। এর ফলে এই অঞ্চলে ভূমিকম্প নিয়মিত ঘটনা, এবং এই সিসমিক কার্যকলাপ হিমালয়ের শৃঙ্গগুলোর উচ্চতা পরিবর্তন করতে পারে বলে আল জাজিরা জানিয়েছে।
ভূতাত্ত্বিক এবং সিসমোলজিস্ট মারিয়ান কার্পলাস আল জাজিরাকে বলেন, “ভূমিকম্প সম্পর্কে শিক্ষা এবং ভূমিকম্প-প্রতিরোধী ভবন নির্মাণের জন্য তহবিল এবং বিদ্যমান কাঠামোর সংস্কার জনগণ এবং ভবনগুলোকে শক্তিশালী ভূমিকম্প থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “পৃথিবীর ব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল, এবং আমরা ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে পারি না। তবে, আমরা বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরিচালনা করে তিব্বতে ভূমিকম্পের কারণ এবং এর কম্পন ও প্রভাব সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি।” কার্পলাস টেক্সাসের এল পাসো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞানের অধ্যাপক।
তিব্বতের সাম্প্রতিক সিসমিক কার্যকলাপের একটি অংশ
এই ভূমিকম্পটি তিব্বতের সাম্প্রতিক সিসমিক কার্যকলাপের একটি অংশ। এর আগে ৮ মে, ২০২৫ তারিখে এই অঞ্চলে ৩.৭ মাত্রার একটি কম্পন অনুভূত হয়েছিল। এনসিএস-এর তথ্য অনুযায়ী, সেই ভূমিকম্পটিও ১০ কিলোমিটার গভীরতায় ঘটেছিল। এছাড়া, গত জানুয়ারি মাসে তিব্বতের তিংরি কাউন্টিতে ৭.১ মাত্রার একটি মারাত্মক ভূমিকম্প আঘাত হানে, যাতে ১২৬ থেকে ৪০০ জনের মৃত্যু হয় এবং ৩৩৮ জন আহত হন।
সেই ভূমিকম্পটি চীনের সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে মারাত্মক ভূমিকম্পগুলোর একটি ছিল। তিব্বতীয়(tibet) মালভূমির উচ্চ উচ্চতা ভারতীয় এবং ইউরেশীয় টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে ক্রাস্টাল ঘনত্ব বৃদ্ধির কারণে ঘটে, যা হিমালয় সৃষ্টি করেছে। এই অঞ্চলে ফল্টিং সাধারণত স্ট্রাইক-স্লিপ এবং নরমাল মেকানিজমের সঙ্গে যুক্ত।
তিব্বতের (tibet) ভূমিকম্পের কারণ হল ভারতীয় প্লেটের ইউরেশীয় প্লেটের নিচে ধীরে ধীরে প্রবেশ। এই প্রক্রিয়া তিব্বত এবং নেপালকে সিসমিকভাবে সক্রিয় অঞ্চলে পরিণত করেছে। এই অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক ফল্ট লাইনগুলো নিয়মিত ভূমিকম্প সৃষ্টি করে, এবং কিছু ক্ষেত্রে এই কম্পন হিমালয়ের শৃঙ্গগুলোর উচ্চতা পরিবর্তন করতে পারে।
অগভীর ভূমিকম্পের কারণে তীব্র কম্পন এবং সম্ভাব্য কাঠামোগত ক্ষতির ঝুঁকি বেশি থাকে, যা তিব্বতের মতো অঞ্চলে বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। এই অঞ্চলের দুর্গম ভূখণ্ড এবং প্রতিকূল আবহাওয়া উদ্ধার কার্যক্রমকে আরও জটিল করে তোলে।
ভূমিকম্প-প্রবণ এই অঞ্চলে প্রস্তুতি এবং প্রশমন কৌশল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলছেন যে ভূমিকম্প-প্রতিরোধী ভবন নির্মাণ এবং বিদ্যমান কাঠামোর সংস্কার জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। তিব্বতের (tibet) মতো উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে ভূমিকম্প সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং উন্নত নির্মাণ কোড প্রয়োগ করা অত্যাবশ্যক।
মারিয়ান কার্পলাসের মতো বিজ্ঞানীরা জোর দিয়ে বলছেন যে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস সম্ভব না হলেও, বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকৃতি এবং প্রভাব সম্পর্কে আরও জানা সম্ভব। এই সাম্প্রতিক ভূমিকম্পটি তিব্বতের সিসমিক ঝুঁকির আরেকটি স্মারক।
এনসিএস এবং অন্যান্য সংস্থা অঞ্চলটির সিসমিক কার্যকলাপ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, এবং আফটারশকের সম্ভাবনার কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিব্বতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম চ্যালেঞ্জিং হলেও, সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে।
তিব্বতের (tibet) ভূমিকম্পের ইতিহাসে বড় মাত্রার কম্পন বিরল হলেও, ছোট এবং মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প নিয়মিত ঘটে। গত বছর এই অঞ্চলে ১০০টিরও বেশি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই ৩.০ মাত্রার উপরে ছিল। তবে, ৭.০ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প খুবই বিরল, এবং গত শতাব্দীতে এমন মাত্র নয়টি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে।
এই ভূমিকম্পের কোনো তাৎক্ষণিক ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি, তবে স্থানীয় প্রশাসন এবং উদ্ধারকারী দলগুলো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তিব্বতের জনগণকে সম্ভাব্য আফটারশকের জন্য প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ভূমিকম্প-প্রতিরোধী অবকাঠামো এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভবিষ্যতে এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি কমানো সম্ভব। তিব্বতের সিসমিক কার্যকলাপের জটিলতা এবং এর ভূতাত্ত্বিক পটভূমি বিবেচনা করে, এই অঞ্চলে আরও গবেষণা এবং প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট।