ওয়াশিংটন: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) সম্পর্ক নিয়ে চলতি বছরে নানা জল্পনা-কল্পনা তৈরি হয়েছে। একদিকে শুল্ক সংক্রান্ত টানাপোড়েন, আবার অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে কূটনৈতিক সমীকরণ—এই দুইয়ের মাঝেই ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক যেন এক অস্থির অবস্থায় পৌঁছেছিল। কিন্তু হঠাৎই ছবিটা বদলাতে শুরু করেছে। আভাস মিলছে, নতুন করে বরফ গলছে দুই দেশের সম্পর্কে।
গত কয়েক মাস ধরেই ট্রাম্প ভারতের উপর নানা শুল্ক আরোপ করেছিলেন। এমনকি দ্বিগুণ শুল্ক চাপানোর মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি সরাসরি ভারতীয় বাণিজ্যক্ষেত্রে চাপ তৈরি করেন। পাশাপাশি ভারতের চিন ও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নিয়েও বারবার তির্যক মন্তব্য করেছিলেন ট্রাম্প। এর ফলে কোয়াড (QUAD) সহযোগিতার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এমনকি শোনা যাচ্ছিল, ভারতে অনুষ্ঠিতব্য কোয়াড সামিটে ট্রাম্প আসবেন না।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত পাল্টে গেল। ভারতের উপর বিরক্তি প্রকাশ করলেও ট্রাম্প ফের নতুন করে সুর বদলালেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত সার্গিও গোর (Sergio Gor) জানিয়েছেন, ট্রাম্প নভেম্বর মাসেই ভারতে আসছেন। তিনি কোয়াড লিডার্স সামিটে যোগ দেবেন এবং সেই সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও করবেন।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ১৭ জুন মোদী ও ট্রাম্পের মধ্যে ফোনালাপ হয়েছিল। তখনই মোদী তাঁকে কোয়াড সামিটে আসার আমন্ত্রণ জানান। প্রথমে সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করলেও পরে বিভিন্ন মার্কিনি সংবাদমাধ্যম দাবি করেছিল যে ভারতের শুল্কনীতি ও রাশিয়া-চিন ঘনিষ্ঠতার কারণে ট্রাম্প সফর বাতিল করতে পারেন। তবে রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে স্পষ্ট, ট্রাম্প সিদ্ধান্ত বদল করেছেন এবং এবার নিশ্চিতভাবেই ভারতে আসছেন।
বাণিজ্য চুক্তি নিয়েও দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। সার্গিও গোর জানিয়েছেন, “আমরা এখন শুল্ক চুক্তির একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতের সমালোচনা করলেও, প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রশংসা তিনি সর্বদাই করেছেন। দুই দেশের মধ্যে অসাধারণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।”
এই চুক্তির মূল উদ্দেশ্য হল—ভারতকে আরও বেশি করে মার্কিন ক্রুড তেল আমদানি করতে উৎসাহিত করা। পাশাপাশি মার্কিন কোম্পানিগুলি ভারতের বিশাল মধ্যবিত্ত বাজারে প্রবেশ করতে চায়। অন্যদিকে ভারতও মার্কিন বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আরও বেশি সহযোগিতা আশা করছে।
ট্রাম্প-মোদীর এই নতুন করে বন্ধুত্বের ইঙ্গিত আন্তর্জাতিক মহলে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, কোয়াড শুধুমাত্র একটি অর্থনৈতিক মঞ্চ নয়, এটি কৌশলগত অংশীদারিত্বের প্রতীক। চিনের বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে আমেরিকা, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার এই জোটকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এখন নজর থাকবে, ট্রাম্প সত্যিই ভারতের উপর থেকে শুল্ক কমান কি না। কারণ, শুল্ক সমস্যার সমাধান হলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নভেম্বরের কোয়াড সম্মেলন ও মোদী-ট্রাম্প বৈঠক তাই দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।