গাজা শান্তি সম্মেলনের মঞ্চে ফের কেন্দ্রে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার মিশরের শার্ম এল-শেখে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক এই সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, “ভারত এক মহান দেশ, আর তার নেতৃত্বে রয়েছেন আমার অত্যন্ত প্রিয় বন্ধু। তিনি অসাধারণ কাজ করছেন। আমি বিশ্বাস করি ভারত ও পাকিস্তান একসঙ্গে খুব সুন্দরভাবে থাকবে।” এই কথার সঙ্গে হাসিমুখে তিনি ঘুরে তাকান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের দিকে, যিনি তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মুহূর্তেই নিস্তব্ধতা ভাঙে সভাকক্ষে।
কূটনৈতিক সৌজন্য
ট্রাম্পের এই মন্তব্য কূটনৈতিক সৌজন্যের বাইরে গিয়ে দুই প্রতিবেশী পরমাণু শক্তিধর দেশের সম্পর্ক নিয়ে তাঁর সক্রিয় ভূমিকার প্রতীক হিসেবেই দেখা হচ্ছে। গাজা শান্তি সম্মেলনে সহ-আয়োজক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। সম্মেলনের শুরুতেই ট্রাম্প প্রশংসা করেন পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্বের৷ বলেন, “আঞ্চলিক শান্তি নির্ভর করছে ভালো বন্ধুদের ভালো কাজের ওপর।”
এরপর রসিকতায় ভর করে ট্রাম্প শেহবাজ শরিফের দিকে তাকিয়ে বলেন, “তুমি তো এ ব্যাপারে সাহায্য করবে, তাই না?” পাল্টা জবাবে শরিফও প্রশংসায় ভরিয়ে দেন ট্রাম্পকে। তিনি বলেন, “এই ভদ্রলোকের উদ্যোগ না থাকলে ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধ এমন অবস্থায় পৌঁছত, যেখানে কেউ বেঁচে থাকত না।”
ভারত-পাকিস্তান সংঘাত থামানোর ক্রেডিট Donald Trump India Pakistan
এর আগেও ট্রাম্প বহুবার দাবি করেছেন যে, তাঁর মধ্যস্থতাতেই ভারত-পাকিস্তান সংঘাত একাধিকবার থেমেছে। গতকাল ইজরায়েলের কেনেসেটে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমি অন্তত আটটি সম্ভাব্য যুদ্ধ থামাতে সাহায্য করেছি — যার মধ্যে ভারত-পাকিস্তান সংঘাত অন্যতম।”
গত ১০ মে ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, মার্কিন মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তান “সম্পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি”-তে সম্মত হয়েছে। যদিও নয়াদিল্লি জানিয়েছিল, যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তটি দু’দেশের সেনা পরিচালকদের সরাসরি আলোচনার ফলাফল।
গাজা শান্তি সম্মেলনে ভারতের উপস্থিতি
গাজা শান্তি সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিশেষ দূত হিসেবে। এটাই ছিল ‘অপারেশন সিনদুর’-এর পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের প্রথম সরকারি স্তরের যোগাযোগ।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক্স-এ লেখেন, “গাজা শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরকে ভারত স্বাগত জানায় এবং আশা করে, এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তির পথ খুলে দেবে।”
মোদীর প্রশংসা ট্রাম্পের উদ্দেশে
সম্মেলনের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক্স-এ লেখেন, “দুই বছরের বন্দিদশা শেষে সমস্ত জিম্মির মুক্তি মানবতার জয়। তাঁদের সাহসী পরিবারগুলির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অটল শান্তি প্রচেষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর দৃঢ় সংকল্পের প্রতি সমর্থন জানাই।”
ঐতিহাসিক দিন, নতুন অধ্যায়
গাজা শান্তি সম্মেলনের পরিসমাপ্তিতে ট্রাম্প স্বাক্ষর করেন এক ঐতিহাসিক যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে, যেখানে অংশ নেন আরব ও মুসলিম বিশ্বের একাধিক রাষ্ট্রনেতা। ট্রাম্পের ভাষায়, “মধ্যপ্রাচ্যের জন্য আজ এক নতুন ও সুন্দর দিন।” দুই বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসানে গাজা থেকে শুরু হওয়া এই নতুন শান্তির বার্তা তাই বিশ্ব কূটনীতির ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায় রচনা করল।