গাজার পর এবার গ্রীনল্যাণ্ড ‘টেক ওভার’ উদ্যোগে ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (donald trump) শুক্রবার সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন, যেখানে গ্রিনল্যান্ডের নিরাপত্তায় আমেরিকা এবং তার সেনাদের অবদানের কথা তুলে ধরা…

jeet win

donald trump wants to take over green land

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (donald trump) শুক্রবার সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন, যেখানে গ্রিনল্যান্ডের নিরাপত্তায় আমেরিকা এবং তার সেনাদের অবদানের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এই ভিডিওতে ঐতিহাসিক ঘটনা এবং বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে গ্রিনল্যান্ডের গুরুত্বের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

ভিডিওটির বর্ণনা

ভিডিওটি শুরু হয় এই বর্ণনা দিয়ে: “টুন্ড্রার ঠান্ডা নীরবতায় একটি বন্ধনের জন্ম হয়েছিল। এটি চুক্তি বা বাণিজ্য থেকে নয়, রক্ত এবং সাহসিকতা থেকে এসেছে। যখন জার্মানি ইউরোপের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল, তখন নাৎসিরা আর্কটিকের দিকে নজর দিয়েছিল। গ্রিনল্যান্ড অনিচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধের ময়দানে পরিণত হয়েছিল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করেছিল—জয় করতে নয়, রক্ষা করতে।”

   

ভিডিওতে ১৯৪৩ সালের একটি ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে। সেসময় নিউইয়র্ক থেকে গ্রিনল্যান্ডের উদ্দেশে প্রায় এক হাজার আমেরিকান সৈন্য এবং চারজন চ্যাপলেইন (পুরোহিত) রওনা হয়েছিলেন। তাদের জাহাজ একটি নাৎসি ইউ-বোটের টর্পেডোর আঘাতে বিধ্বস্ত হয় এবং উত্তর আটলান্টিকের হিমশীতল জলে তাদের মৃত্যু হয়। চারজন চ্যাপলেইন আমেরিকান এবং গ্রিনল্যান্ডের মানুষদের উদ্ধারে সাহায্য করেছিলেন, যা তাদের ত্যাগের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

আরো দেখুন MGNREGA জব কার্ড বাতিল ও পুনর্বহালের নতুন নিয়ম জারি

জেডি ভ্যান্সের গ্রিনল্যান্ড সফর (donald trump)

এই ভিডিও প্রকাশের সময় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স গ্রিনল্যান্ডে সফরে রয়েছেন। গ্রিনল্যান্ড বর্তমানে ডেনমার্কের অধীনে একটি আধা-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, যদিও এটি দীর্ঘদিন ধরে নিজের সার্বভৌম রাষ্ট্রের দাবি জানিয়ে আসছে। ভ্যান্স গ্রিনল্যান্ডে বলেন, “প্রেসিডেন্ট আর্কটিক নিরাপত্তার বিষয়ে খুবই আগ্রহী, যেমনটা আপনারা সবাই জানেন। এটি আগামী কয়েক দশকে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।”

ভ্যান্সের এই সফরের ঠিক আগে গ্রিনল্যান্ডের রাজধানী নুকে একটি নতুন সরকারি জোট ঘোষণা করা হয়েছে। এই জোট বর্তমানে ডেনমার্কের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার লক্ষ্যে কাজ করছে। তবে, ট্রাম্প প্রশাসন বারবার গ্রিনল্যান্ডকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশ করে নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, যা ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

ভিডিওতে উল্লিখিত ১৯৪৩ সালের ঘটনা আমেরিকা ও গ্রিনল্যান্ডের মধ্যে একটি গভীর সম্পর্কের সূচনা করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি জার্মানি ডেনমার্ক দখল করলে গ্রিনল্যান্ড প্রতিরক্ষাহীন হয়ে পড়ে। আমেরিকা তখন সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে এবং গ্রিনল্যান্ডকে সুরক্ষিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ঘটনা গ্রিনল্যান্ডে আমেরিকার দীর্ঘমেয়াদী উপস্থিতির ভিত্তি তৈরি করে।

Advertisements

বর্তমান হুমকি

ট্রাম্পের (donald trump) শেয়ার করা ভিডিওতে বর্তমানে রাশিয়া ও চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির কথা বলা হয়েছে। আর্কটিক অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরফ গলছে, যার ফলে নতুন সমুদ্রপথ খুলে যাচ্ছে। এই পথগুলো রাশিয়া ও চীনের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গ্রিনল্যান্ডের ভৌগোলিক অবস্থান এটিকে এই অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র করে তুলেছে। ভিডিওতে বলা হয়েছে, এই হুমকি মোকাবিলায় আমেরিকা ও গ্রিনল্যান্ডের মধ্যে ঐক্য প্রয়োজন।

গ্রিনল্যান্ডের রাজনৈতিক অবস্থান

গ্রিনল্যান্ডের নতুন সরকারি জোট ডেনমার্কের সঙ্গে সম্পর্ক ধরে রাখতে চায়। তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের বারবার গ্রিনল্যান্ড অধিগ্রহণের কথা বলা স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। গ্রিনল্যান্ডের অনেক বাসিন্দা পূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষে থাকলেও, আমেরিকার অধীনে যাওয়ার বিরোধিতা করে। নুকে ঘোষিত জোট সরকার এই চাপের মধ্যে একটি ঐক্যের বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে।

ভ্যান্সের বক্তব্য

গ্রিনল্যান্ডে পিটুফিক স্পেস বেসে আমেরিকান সৈন্যদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ভ্যান্স বলেন, “ট্রাম্প প্রশাসন আর্কটিক নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেয়। এটি ভবিষ্যতে আরও বড় ইস্যু হয়ে উঠবে।” তিনি গ্রিনল্যান্ডের কৌশলগত গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে আমেরিকার ভূমিকার উপর জোর দেন।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের এই ভিডিও এবং ভ্যান্সের সফর আন্তর্জাতিক মঞ্চে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ডেনমার্কের কর্মকর্তারা এর আগে গ্রিনল্যান্ড বিক্রির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। রাশিয়া ও চীনও আর্কটিকে তাদের স্বার্থ রক্ষায় সক্রিয় রয়েছে। এই পরিস্থিতি গ্রিনল্যান্ডকে একটি ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।

ট্রাম্পের ভিডিও এবং ভ্যান্সের সফর গ্রিনল্যান্ডের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। আমেরিকা যেখানে এটিকে নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য বলছে, সেখানে গ্রিনল্যান্ডের জনগণ এবং ডেনমার্ক তাদের স্বাধীন অবস্থান বজায় রাখতে চায়। এই উত্তেজনা আগামী দিনে কী রূপ নেয়, তা বিশ্ববাসীর নজরে থাকবে।