বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন স্নায়ুযুদ্ধের ইঙ্গিত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার ফের নিশ্চিত করলেন, আমেরিকা খুব শিগগিরই পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা শুরু করতে চলেছে। কয়েকদিন আগেই তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে, অন্যান্য দেশের মতো আমেরিকাও এখন থেকে “সমান ভিত্তিতে” পারমাণবিক পরীক্ষা চালাবে। আর এবার, সেই অবস্থানেই আরও স্পষ্ট ও দৃঢ় হলেন ট্রাম্প।
এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রেসিডেন্ট বলেন, “খুব শিগগিরই জানতে পারবেন। আমরা কিছু পরীক্ষা করব, হ্যাঁ। অন্য দেশগুলো করছে, আমরা-ই বা করব না কেন? তারা করলে আমরাও করব।”
তবে তিনি স্পষ্ট করে জানাননি, এই পরীক্ষাগুলির মধ্যে ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক বিস্ফোরণও অন্তর্ভুক্ত থাকবে কিনা।
“অন্য দেশগুলো করছে, আমরাও করব” ট্রাম্পের সাফ বার্তা
ট্রাম্প বলেন, “আমেরিকার হাতে বিশ্বের সর্বাধিক পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার রয়েছে। আমার প্রথম মেয়াদকালেই এই অস্ত্রগুলির আধুনিকীকরণ ও সংস্কার সম্পূর্ণ হয়েছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে এমন ধ্বংসাত্মক শক্তির ব্যবহার ঘৃণা করি, কিন্তু অন্যদের প্রতিযোগিতা দেখে আর বিকল্প রইল না।”
তিনি নিজের সামাজিক মাধ্যম X (পূর্বে টুইটার)-এ লেখেন, “অন্যান্য দেশের পারমাণবিক পরীক্ষার প্রোগ্রামের কারণে আমি যুদ্ধ দফতরকে নির্দেশ দিয়েছি, আমেরিকাও এখন থেকে নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করবে। প্রক্রিয়াটি তাৎক্ষণিকভাবে শুরু হবে।”
ট্রাম্পের দাবি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রাশিয়া বা চীনের তুলনায় “অনেক বেশি এবং উন্নত” পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। তাঁর ভাষায়, “আমেরিকা প্রথম স্থানে, রাশিয়া দ্বিতীয়, আর চীন অনেক পিছিয়ে। তবে পাঁচ বছরের মধ্যে তারা কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে।”
রাশিয়ার পারমাণবিক প্রদর্শনের পরেই ট্রাম্পের পদক্ষেপ
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার সাম্প্রতিক পারমাণবিক প্রদর্শনের পরই ট্রাম্প এই ঘোষণার পথে হাঁটলেন। সম্প্রতি মস্কো ‘বুরেভেস্তনিক’ (9M730) পারমাণবিকচালিত ক্রুজ মিসাইল এবং ‘পোসেইডন’ নামের পারমাণবিকচালিত আন্ডারওয়াটার ড্রোনের পরীক্ষা চালিয়েছে— যেগুলিকে রাশিয়া “দীর্ঘ পাল্লার কৌশলগত অস্ত্র” হিসেবে ঘোষণা করেছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজেই এই পরীক্ষাগুলির তদারক করেন। ট্রাম্প এই ঘটনার সমালোচনা করে একে “অযৌক্তিক ও বিপজ্জনক প্রদর্শন” বলে মন্তব্য করেছেন।
বিশ্বজুড়ে আশঙ্কা ও কূটনৈতিক চাঞ্চল্য
ট্রাম্প প্রশাসনের এই ঘোষণায় আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে প্রবল উদ্বেগ ও চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমেরিকার এই সিদ্ধান্ত পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে নতুন মাত্রা দিতে পারে, বিশেষত এমন সময়ে, যখন রাশিয়া ও চিনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আগের চেয়ে আরও টানটান অবস্থায় রয়েছে।
ওয়াশিংটন এখনও কোনও নির্দিষ্ট পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেনি। তবু ট্রাম্পের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, “প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে”, এক বাক্যেই যেন বিশ্বশক্তিগুলির মধ্যে উত্তেজনার পারদ আরও বাড়িয়ে দিল।
