ট্রাম্পের ৪.৯ বিলিয়ন ডলার বিদেশি সাহায্য বাতিলে বিতর্ক

ওয়াশিংটন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসন্ন অর্থবর্ষের প্রাক্কালে নতুন করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) হোয়াইট হাউস থেকে এক…

ট্রাম্পের ৪.৯ বিলিয়ন ডলার বিদেশি সাহায্য বাতিলে বিতর্ক

ওয়াশিংটন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসন্ন অর্থবর্ষের প্রাক্কালে নতুন করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) হোয়াইট হাউস থেকে এক চাঞ্চল্যকর ঘোষণা করেছেন—তিনি কংগ্রেস অনুমোদিত ৪.৯ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক সাহায্যের অর্থ ব্যয় বাতিল করছেন। এই পদক্ষেপ মার্কিন প্রশাসনের বাজেট প্রক্রিয়ায় কার্যনির্বাহী এবং আইনসভা বিভাগের ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে।

বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ট্রাম্প প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসনকে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠান, যেখানে তিনি ১৫টি আন্তর্জাতিক প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ অর্থ আটকে দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী সরকারি অর্থ বরাদ্দের মূল ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে থাকলেও ট্রাম্প প্রশাসন এবার “পকেট রিসিশন” বা বাজেট বাতিলের এক বিরল কৌশল ব্যবহার করছে। সর্বশেষ ১৯৭৭ সালে এই কৌশল ব্যবহৃত হয়েছিল।

   

ট্রাম্পের বাজেট ডিরেক্টর রাসেল ভট-এর দাবি, এই অর্থ সর্বোচ্চ ৪৫ দিন ধরে আটকে রাখা সম্ভব, যা অর্থবছরের শেষ দিন ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অর্থব্যয়ের সময়সীমা শেষ করে দেবে। এই তহবিল মূলত বিদেশি সাহায্য, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অভিযান এবং আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে ব্যয় করার কথা ছিল। অধিকাংশ অর্থ পরিচালনা করত মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (USAID), যা ট্রাম্প প্রশাসন গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক এই সিদ্ধান্ত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, “এটি আমাদের বাজেট এবং তরল অর্থনীতিকে আরও সংকটে ফেলবে। আমরা মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করব।”

ডেমোক্র্যাটিক শিবিরের অভিযোগ, ট্রাম্প প্রশাসন এর আগে থেকেই মোট ৪২৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি তহবিল স্থগিত রেখেছে। সেনেটের ডেমোক্র্যাটিক নেতা চাক শুমার এই পদক্ষেপকে সরাসরি সরকার বন্ধের পরিকল্পনার সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাঁর অভিযোগ, “ট্রাম্প কংগ্রেস পাস করা যে কোনও অর্থনৈতিক আইনকে উপেক্ষা করে সেপ্টেম্বরের শেষে সরকার বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন।”

Advertisements

রিপাবলিকান দলের অধিকাংশ সদস্য এই সিদ্ধান্তের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তারা বলছেন, যেকোনও উপায়ে সরকারি ব্যয় সংকোচন করা জরুরি। তবে মেইনের রিপাবলিকান সিনেটর সুসান কলিন্স, যিনি সিনেট অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস কমিটির প্রধান, এই পদক্ষেপকে সরাসরি অবৈধ বলেছেন। তাঁর ভাষায়, “আইনকে পাশ কাটানোর পরিবর্তে দ্বিদলীয় বাজেট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যয় কমানোর চেষ্টা হওয়া উচিত।”

এদিকে হোয়াইট হাউসের এই সিদ্ধান্ত আমেরিকার আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে উন্নয়নশীল দেশের বিভিন্ন সংস্থা মার্কিন সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন বৈদেশিক নীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও এই সিদ্ধান্ত গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

সব মিলিয়ে, সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ অর্থবর্ষ শেষ হওয়ার আগে মার্কিন প্রশাসনে বাজেট সংকট আরও গভীর হতে পারে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। কংগ্রেস এবং হোয়াইট হাউসের মধ্যে এই ক্ষমতার দ্বন্দ্ব যদি সমাধান না হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রে সরকার আংশিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।