১৫-র নীচে সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ, আসছে কঠোর আইন

Social Media

ডেনমার্ক: সরকার শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এক ঐতিহাসিক ও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে (Children online safety law) নিষেধাজ্ঞা জারি করতে দেশটির সরকার আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে এটি একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ বলে মনে করা হচ্ছে, যা আগামী দিনে অন্যান্য দেশগুলোকেও প্রভাবিত করতে পারে।

Advertisements

শুক্রবার ডেনমার্কের ডিজিটাল বিষয়ক মন্ত্রী ক্যারোলাইন স্টেজ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন যে, শিশুদের অনলাইন জীবনে ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি, সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি, সহিংস ভিডিও, আত্মহত্যা ও আত্মক্ষতি সংক্রান্ত কনটেন্টের প্রভাব এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে।

   

মন্ত্রী আরও বলেন, “ডেনমার্কে ১৩ বছরের নিচে ৯৪ শতাংশ শিশুর অন্তত একটি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট রয়েছে এবং ১০ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে।” এই পরিসংখ্যান দেশের জন্য উদ্বেগজনক, কারণ অল্প বয়সেই শিশুরা অনলাইনে বিষাক্ত কনটেন্ট, বুলিং, অনুপযুক্ত ভিডিও এবং মানসিক চাপের সম্মুখীন হচ্ছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে তাদের স্বাভাবিক শৈশব, শিক্ষাজীবন এবং মানসিক স্বাস্থ্যে।

এই আইন সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর করা হবে না। ডেনমার্কের সংসদে আইনটি পাশ হতে কয়েক মাস সময় লাগবে। তবে সরকার স্পষ্ট জানিয়েছে— আইনে যেন কোনো ফাঁক না থাকে এবং বড় টেক কোম্পানিগুলো যেন তার অপব্যবহার করতে না পারে, সেদিকেও কড়া নজর রাখা হবে।

১৫ বছরের কম বয়সীরা সরাসরি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারবে না, তবে ১৩ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের অনুমতি ও বিশেষ যাচাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হতে পারে। অর্থাৎ, অভিভাবকের তত্ত্বাবধান এবং প্রশাসনিক অনুমোদন ছাড়া ১৩–১৫ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রেও সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্সেস মিলবে না।

ডেনমার্কে নাগরিকদের জন্য জাতীয় ডিজিটাল আইডি (Electronic ID) ব্যবস্থা চালু রয়েছে। ১৩ বছরের ওপরে প্রায় সব শিশুর এই আইডি রয়েছে। সরকার একটি Age Verification App চালু করার পরিকল্পনা করেছে, যা বয়স যাচাইয়ের জন্য ব্যবহার করা হবে।

Advertisements

যদিও সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোকে সরাসরি এই অ্যাপ ব্যবহারে বাধ্য করা যাবে না, তবে তাদের শক্তিশালী ও কার্যকর বয়স যাচাইকরণ ব্যবস্থা চালু করতেই হবে। তা করতে ব্যর্থ হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডিজিটাল পরিষেবা আইন (DSA) অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে তাদের বৈশ্বিক আয়ের ৬ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে।

ইইউ-র নিয়ম অনুযায়ী ১৩ বছরের নিচে শিশুদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আছে, তবে ডেনমার্ক এটিকে ১৫ বছরে উন্নীত করার প্রস্তাব দিয়েছে, যা ইউরোপে সবচেয়ে কঠোর পদক্ষেপগুলোর একটি। এর আগে অস্ট্রেলিয়া ১৬ বছরের নিচে সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ করে বিশ্বে প্রথম আইন চালু করেছে।

ডেনমার্ক সরকার জানিয়েছে, শিশুদের ঘুম, পড়াশোনা ও মনোযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যালগরিদম মানসিক চাপ, তুলনামূলক হীনমন্যতা ও আসক্তি বাড়াচ্ছে, আত্মক্ষতি বা আত্মহত্যা সংক্রান্ত কনটেন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, বুলিং, ট্রোলিং এবং মানসিক নির্যাতন বৃদ্ধি পাচ্ছে, প্রযুক্তি সংস্থাগুলো নিরাপত্তায় যথেষ্ট বিনিয়োগ করছে না৷

টিকটক জানিয়েছে তারা অভিভাবক নিয়ন্ত্রিত Family Pairing এবং ৫০টিরও বেশি নিরাপত্তা ফিচার চালু রেখেছে। তবে Meta (Facebook ও Instagram মালিক) এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি।

মন্ত্রী ক্যারোলাইন স্টেজ জোর দিয়ে বলেন, “আমরা টেক কোম্পানিগুলোকে বহুবার সুযোগ দিয়েছি, কিন্তু শিশুদের সুরক্ষায় তারা যথেষ্ট দায়িত্ব নেয়নি। এখন আমরা নিজ হাতে দায়িত্ব তুলে নেব এবং আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করব।”