HomeWorldউত্তর সুমাত্রায় বন্যায় মৃত্যু ৩৪, নিখোঁজ বহু

উত্তর সুমাত্রায় বন্যায় মৃত্যু ৩৪, নিখোঁজ বহু

- Advertisement -

ইন্দোনেশিয়ার উত্তর সুমাত্রা প্রদেশে প্রবল বর্ষণ (Indonesia floods) ও ভূমিধসের জেরে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি হিসেবে এখন পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে এবং ৫২ জনের খোঁজ নেই। টানা ভারী বর্ষণে পাহাড়ি অঞ্চলগুলো ধসে পড়েছে, নদী উপচে জনবসতিতে ঢুকে পড়েছে এবং কয়েকটি শহর পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হওয়া ক্রান্তীয় ঝড়টি সুমাত্রার একাধিক অঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টিপাত ঘটায়। ইন্দোনেশিয়ার আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, এই বিরল ট্রপিক্যাল সাইক্লোন সুমাত্রার উপকূলজুড়ে জলস্তর দ্রুত বৃদ্ধি করেছে, যা আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের জন্ম দেয়। বহু এলাকায় বিদ্যুৎ ও টেলিকম পরিষেবা সম্পূর্ণ অচল হয়ে গেছে।

   

উত্তর সুমাত্রা পুলিশের মুখপাত্র ফেরি ওয়ালিনটুকান জানিয়েছেন, সব ধরণের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকারীরা স্থলপথে পৌঁছাতে পারছেন না। তিনি বলেন, “অনেক এলাকা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।”

ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় দুর্যোগ প্রশমন সংস্থা (BNPB) জানিয়েছে, ৮,০০০-এর বেশি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরানো হয়েছে, এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে খাদ্য, পানি, ওষুধ পাঠাতে হেলিকপ্টারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। বহু স্থানে পাহাড় কেটে নেমে আসা মাটি রাস্তা ঢেকে ফেলেছে, ফলে ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে উদ্ধার দল পৌঁছাতেও সমস্যা তৈরি হয়েছে।

সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে রয়েছে সিবোলগা ও সেন্ট্রাল টাপনুলি। প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তা ইউয়ুন কারসেনো জানিয়েছেন, “সেন্ট্রাল টাপনুলিতে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। মোবাইল নেটওয়ার্ক, বিদ্যুৎ সব বন্ধ। আমরা সেখানকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না।”

এলাকায় ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া বাড়ির ছাদে একটি পরিবার আশ্রয় নিচ্ছে, একজন মানুষ প্লাস্টিকের টবের মধ্যে একটি শিশুকে রেখে নিরাপদ স্থানে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। চারদিকে শুধু প্রবল স্রোত, ধ্বংসস্তূপ ও ভেঙে পড়া ঘরবাড়ির দৃশ্য।

উত্তর সুমাত্রার পাশাপাশি পশ্চিম সুমাত্রা ও আচেহ প্রদেশেও ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। আচেহের সরকারি সংবাদ সংস্থা আন্তারা জানিয়েছে, ২৩টি জেলার মধ্যে ১০টিই পুরোপুরি বন্যাগ্রস্ত। হাজারো মানুষ ঘরছাড়া, বহু এলাকা এখনো কোমরসমান পানির নিচে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনিয়ন্ত্রিত বনউজার, পাহাড় কেটে মানুষের বসতি গড়া এবং জলাধার দখলের ফলে সুমাত্রা অঞ্চলে বন্যার ঝুঁকি বছর বছর বাড়ছে। পরিবেশবিদদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এ ধরনের সাইক্লোন ঘন ঘন দেখা দিচ্ছে, এবং এর ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মাত্রাও বাড়ছে।

সরকার জরুরি অবস্থা জারি করে উদ্ধার তৎপরতা জোরদার করেছে। নিখোঁজদের খুঁজে বের করতে ড্রোন, স্নিফার ডগ ও বিশেষ প্রশিক্ষিত দল পাঠানো হয়েছে। তবে প্রবল স্রোত ও রাস্তা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় তল্লাশি অভিযানে গতির অভাব দেখা দিচ্ছে।

উদ্ধারকর্মীদের আশঙ্কা, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও মৃতদেহ পাওয়া যেতে পারে। বন্যার পানি নামলেও ভূমিধসের ঝুঁকি এখনও রয়ে গেছে।

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular