রহস্যজনক ফ্লু জাতীয় রোগের প্রকোপ, ৭১ জনের মৃত্যু, অর্ধেক শিশু

আফ্রিকার কঙ্গোতে এক রহস্যজনক ফ্লু জাতীয় রোগের (Congo mystery flu) প্রাদুর্ভাবের খবর সামনে এসেছে৷ যা দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় কওয়াংগো প্রদেশে বেশ কিছু মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।…

Congo on High Alert as Mystery Flu-like Disease Claims 71 Lives

আফ্রিকার কঙ্গোতে এক রহস্যজনক ফ্লু জাতীয় রোগের (Congo mystery flu) প্রাদুর্ভাবের খবর সামনে এসেছে৷ যা দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় কওয়াংগো প্রদেশে বেশ কিছু মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রী রজার কাম্বা নিশ্চিত করেছেন যে, এ পর্যন্ত ৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ২৭ জন হাসপাতালে এবং ৪৪ জন কমিউনিটি এলাকায় মারা গেছেন। এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১০ নভেম্বর থেকে ২৫ নভেম্বরের মধ্যে, যখন কওয়াংগো প্রদেশের পানজি স্বাস্থ্য অঞ্চলে অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত হয়।

কঙ্গোর রাজধানী কিনশাসা থেকে প্রায় ৪৩৫ মাইল দূরে অবস্থিত এই স্বাস্থ্য অঞ্চলে মোট ৩৮০ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু। আফ্রিকা সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (এফ্রিকা সিডিসি)-এর প্রধান জিন কাসেয়া জানিয়েছেন, রোগের বিশদ তথ্য আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আসবে, কারণ আক্রান্তদের ল্যাব পরীক্ষার ফলাফল এখনও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, “প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি এটি একটি শ্বাসতন্ত্র রোগ হতে পারে, তবে ল্যাব পরীক্ষার ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।”

   

রোগটির সংক্রামক প্রকৃতি এবং ছড়ানোর উপায় এখনও পরিষ্কার নয়। আক্রান্তদের মধ্যে যে সমস্ত উপসর্গ দেখা গেছে, সেগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, কাশি এবং অ্যানিমিয়া। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি অনুসরণ করতে এবং আরও তথ্য সংগ্রহ করতে ওই অঞ্চলে একটি বিশেষজ্ঞ দলের পাঠিয়েছে, তবে পানজি স্বাস্থ্য অঞ্চলে প্রবেশের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। কারণ এটি একটি প্রত্যন্ত এলাকা এবং সেখানে পর্যাপ্ত পরীক্ষার সুবিধাও নেই। এর ফলে, রোগী থেকে নেওয়া নমুনাগুলি কিকুইট শহরে ৫০০ কিলোমিটার দূরে নিয়ে যেতে হয়েছে।

জাতীয় জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের প্রধান ডিয়ুডোনে ম্বাম্বা এই অঞ্চলের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, পানজি অঞ্চলের ৪০% জনগণ অপুষ্টিতে ভুগছে। ম্বাম্বা আরও বলেন, “পানজি একটি অত্যন্ত দুর্বল এলাকা, যেখানে দুই বছর আগে টাইফয়েড জ্বরের মহামারি দেখা দিয়েছিল এবং বর্তমানে মৌসুমী ফ্লুর পুনরুত্থান হচ্ছে।”

এই প্রাদুর্ভাবের মধ্যে স্থানীয় এক বাসিন্দা ক্লড নিয়ংগো দুঃখের সাথে বলেছেন যে, তার স্ত্রী এবং সাত বছর বয়সী কন্যা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তিনি জানান, “আমরা জানি না এই রোগের কারণ কী, তবে আমি শুধু উচ্চ তাপমাত্রা, বমি এবং তারপর মৃত্যুর ঘটনা লক্ষ্য করেছি।” অপর এক স্থানীয় নেতা লুসিয়েন লুফুতু, কওয়াংগো প্রদেশের নাগরিক সমাজ পরামর্শক ফ্রেমওয়ার্কের সভাপতি, এই রোগের অজ্ঞাত পরিচিতির কারণে চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং ওষুধের অভাবের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “রোগটি এখনও পরিচিত নয়, ফলে বেশিরভাগ জনগণ প্রথাগত চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা নিচ্ছেন।”

এখনও পর্যন্ত কঙ্গো সরকার নিশ্চিত করেনি যে, এই রোগটি অন্য স্বাস্থ্য অঞ্চলেও ছড়িয়েছে কিনা। তবে কাসেয়া বলেন, “এখন পর্যন্ত অন্য কোথাও এর বিস্তার দেখা যায়নি।” কঙ্গো বর্তমানে মপক্স মহামারির সাথে লড়াই করছে, যা ইতিমধ্যেই ১,০০০-এরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। কঙ্গোর জনগণ এবং স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এখনও এই রহস্যজনক রোগের প্রকৃতি এবং তা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং আফ্রিকা সিডিসি সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং কঙ্গোর স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে সমর্থন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। যদিও বর্তমানে রোগটির চিকিৎসার জন্য কোন নির্দিষ্ট ওষুধ বা ভ্যাকসিন নেই, তবে বিশেষজ্ঞরা মহামারি পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে চেষ্টা করছেন।

কঙ্গো সরকার এবং আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থাগুলি রোগটি মোকাবিলার জন্য যে উদ্যোগগুলি গ্রহণ করেছে, সেগুলি আরও জোরালো হতে পারে যদি এর প্রকৃতি এবং সংক্রমণের পদ্ধতি দ্রুত জানা যায়। এই পরিস্থিতি কঙ্গোর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে, কারণ এটি ইতিমধ্যেই একটি অত্যন্ত দরিদ্র এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বল দেশের মধ্যে একটি।

এই রোগের দ্রুত বিস্তার এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণের অভাবে কঙ্গোর জনগণের উপর চাপ আরও বাড়ছে। যদি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলি না নেওয়া হয়, তবে রোগটি আরও বেশি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলবে।

অবশ্যই, কঙ্গোর সরকার এবং আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থাগুলির উপর নজর রাখতে হবে, যাতে তারা দ্রুত এবং কার্যকরীভাবে রোগটির উৎস চিহ্নিত করতে এবং আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি এই ধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

কঙ্গো সরকারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতির জন্য দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এতে রোগ শনাক্তকরণ, দ্রুত চিকিৎসা, ওষুধ সরবরাহ, এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কার্যকর কৌশল গ্রহণ করতে হবে। একে ছাড়া, এই ধরনের রোগ ভবিষ্যতে আরও বড় বিপদের কারণ হতে পারে।